ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪ |

EN

অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ, আপনারা আমার ছেলেকে বাচাঁন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, অক্টোবর ২৪, ২০২২

অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ, আপনারা আমার ছেলেকে বাচাঁন
দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছেন ইমন হোসেন (২৪)। সম্প্রতি টাকার অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। কথা বলতে পারলেও শরীরে শক্তি পান না ইমন। কয়েক বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছেন। বেকার বাবা, পরিচ্ছন্ন কর্মী মা আর ছোট ভাইয়ের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে।

এমন দুঃখ-দুর্দশার অবস্থায় ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আকুল আবেদন জানিয়েছেন ইমন হোসেনের পরিবার।

দীর্ঘ ৪ বছর ধরে লিভার সিরোসিস রোগের সাথে যুদ্ধ করে চলছেন ইমন। অসুস্থতার কারনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে ৪ বছর আগেই। মারাত্মক অসহায় অবস্থায় বেঁচে আছেন সে। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে দরকার প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। কিন্তু এতো টাকা তাদের নেই। 

অসুস্থ ইমন হোসেন কুষ্টিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আড়ুয়া পাড়া এলাকার শহীদ লিয়াকত আলী সড়কের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। ইমনের  বাবা তার চাচার সাথে চাউলের ব্যবসা করতেন। কয়েকবছর আগে চাচা মারা যাওয়ার পর তিনি বেকার হয়ে পড়েন। ইমনের মা একটি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে চাকরি করেন। তার ছোট ভাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। কালিতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতেন ইমন। ৮ম শ্রেণিতে পড়াকালীন অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। 

 
ইমনের মা বেবি সুলতানা বলেন, আমাদের সংসার সচ্ছল ও সুখের ছিল। ছেলে পড়াশোনা করতো, স্বামী ব্যবসা করতো। আমাদের  সেই সুখ ২০১৯ সালে বিষাদে রূপান্তরিত হয়। ২০১৯ সালে ছেলের লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়। দিন দিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক ও স্বজনদের পরামর্শে আমরা তাকে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন হাসপাতাল, রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লিভার, পরিপাকতন্ত্র ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের লিভার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ। এবং একই মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. আব্দুল আলীমের তত্ত্বাবধানে রাজশাহীতে প্রায় দেড় বছর চিকিৎসা করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর পরে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লিভার বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের চিকিৎসা করিয়েছি। তাতেও সুস্থ না হওয়ায় এবছরের আগস্ট মাসে ভারতের হায়দারের কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। সেখানকার চিকিৎসক জানিয়েছেন আমার ছেলের লিভারে ইনফেকশন হয়ে প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। শরীরে একটি নতুন লিভার স্থাপন করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু অর্থের অভাবে আমরা নিরুপায়। এরই মধ্যে সবকিছু চিকিৎসার খরচে ব্যয় করে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। দুবেলা দু মুঠো খাবার মতো অবস্থা এখন আর আমার পরিবারে নেই। অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ, আপনারা আমার ছেলেকে বাচাঁন। ছেলেকে বাচাঁতে ৩০ লাখ টাকা দরকার। 

সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়ে ছেলেকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে ইমনের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের জুন মাসে আমার ছেলে জন্ডিসে আক্রান্ত। তারপর লিভার সিরোসিস রোগ ধরা পড়ে। গত ৪ বছর ধরে এ রোগে আক্রান্ত। গত কয়েকবছর আমিও বেকার হয়ে গেছি। পরিবারে উপার্জন বলতে পরিচ্ছন্নতা কর্মী স্ত্রীর কয়েক হাজার টাকা বেতন পান। তাতে সংসার চলে না, কখনো অর্ধাহারে আবার কখনো অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন আমাদের। ছেলের অবস্থাও ভালো না। ডাক্তারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ধার দেনা করে ছেলেকে ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম। পরিক্ষা নীরিক্ষা করে ছেলের শরীরে একটি নতুন লিভার স্থাপন করার কথা বলেছে ডাক্তাররা। তাতে প্রয়োজন প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা, কিন্তু টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা বন্ধ। আমি সবার কাছে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা কামনা করছি। আমার পক্ষে ছেলের চিকিৎসা করার সক্ষমতা নেই। ঠিকমতো সংসারই চলে না। চিকিৎসা করাবো কি দিয়ে?  আমার ছেলেকে বাঁচতে চাই, আমাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করুন। আপনারা আমার ছেলেকে বাচাঁন। 

প্রতিবেশীরা বলেন, ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের পরিবার এখন নিঃস্ব। বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। অনাহারে- অর্ধাহারে দিন পার হয় তাদের। অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন লিভার স্থাপন করার জন্য অনেক টাকা দরকার। এতো টাকা খরচ করে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই তাদের। এজন্য ইমনকে সুস্থ করতে সবাই সহযোগিতা করুন। 

অসুস্থ ইমন বলেন, আমি লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত। কথা বলতে পারলেও শরীরে শক্তি পান না। ভারতের অপারেশন করাতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা প্রয়োজন। শরীরে একটি নতুন লিভার স্থাপন করাতে হবে। কিন্তু আমার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অর্থের অভাবে বর্তমানে চিকিৎসা বন্ধ। আমি সবার কাছে সাহায্য চাই। সবাই আমাকে সাহায্য করুন, আমি বাঁচতে চাই।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবাউদ্দিন সওদাগরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।