ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪ |

EN

লোহার বদলে বাঁশ ব্যবহার, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ভবন ধসে ২ শ্রমিকের মৃত্যু

মো. মাইন উদ্দিন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | আপডেট: মঙ্গলবার, অক্টোবর ১১, ২০২২

লোহার বদলে বাঁশ ব্যবহার, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ভবন ধসে ২ শ্রমিকের মৃত্যু
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিমার্ণাধীন নতুন ভবনের পার্কিং শেডের নির্মাণ কাজে লোহার পাইপের বদলে ব্যবহার করা হয়েছিলো বাঁশের খুঁটি। আর এতে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে দুই নির্মাণ শ্রমিককে। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে পৃথক দুটি কমিটি। তবে দুর্ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন নির্মাণ কাজের উপ-ঠিকাদার।

গেলো শনিবার বিকেলে ধসে পড়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন নতুন ভবনের কেন্টিলিভার (পার্কিং শেড)। এতে অকালে প্রাণ হারায় দুই নির্মাণ শ্রমিক। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাঁতরাচ্ছে আরও ৫ জন। শ্রমিকরা বলছেন- ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর অনিয়ম-অবহেলার কারণেই এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তারা। অর্থাৎ লোহার পাইপের বদলে সেন্টারিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়েছিলো বাঁশের খুঁটি। লোহার পাইপ ব্যবহার করলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো বলে মনে করছেন শ্রমিকরা।

আহত শ্রমিক মো. রোকন বলেন সেন্টারিং ব্যবস্থা ঠিক না করার কারনে ইঞ্জিনিয়ারের গাফিলতির কারনে এ দূর্ঘটনা ঘটেছে দূর্বল বাশের খুটি দিয়ে ২০ ফুটের অধিক এধরনের ছাদ ঢালাই ভেঙ্গে পড়েছে। 

কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ভবনের নির্মাণ কাজ চলছিলো তা জানাতে জেলা পরিষদ কর্মকর্তাদের সময় লেগেছে ৪০ ঘন্টারও বেশী। প্রায় ২ দিন বাদে জানা গেলো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ‘এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা’। তবে এই ঠিকাদার জানালেন চুক্তিতে তার কাছ থেকে কাজটি কিনে নিয়েছিলেন প্রণত মিত্র চৌধুরী নামে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন প্রণত মিত্র চৌধুরী।

ঠিকাদার এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন আমার নামে যে কাজটি উপ-ঠিকাদার দিয়ে কাজটি করাচ্ছিলাম মূলত আমার নামে হলেও উপ-ঠিকাদার কাজটা করে দেওয়ার কথা বলে আমার সাথে তার একটা চুক্তি হয়েছিলো। মূলত কাজটি আমার নামিও কিন্তু কাজটি করছিলেন তরন্যত শাহা নামে অন্য একজন। ঘটনার পর আমি ওনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু ঘটনার পর ওনাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। দুটি কমিটিকেই সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন তদন্ত রির্পোটের উপর ভিত্তি করে যারা দুষি সাব্বস্ত হয় তাদেরকে সরকার নিয়ম অনুযায়ী যা যা ব্যবস্থা নেয়া দরকার আমরা তাই করবো।

এদিকে দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করার প্রতিশ্রুতি এবং নিহতদের দুই পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয়েছে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে। প্রতিশ্রুতি দিলেও চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আহতদের স্বজনদের। আর নিহতদের পরিবার বলছে-  এই ক্ষতিপূরণ কেবল নামমাত্র। ঘটনার পর দুর্ঘটনার কারণ জানতে গেলে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি সংকর চাকমাকে নাম্বারে একাধিক বার কল দিলেও নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

দুর্ঘটনায় আহত মো. সোহেল এর মা বলেন ঔষধ পত্রের জন্য ১ জনকে দায়িত্ব দিলেও তার কোন খবর পাওয়া যায় না মাঝে মধ্যে ফোন ধরলেও আসে আসেনা এভাবে অবহেলায় কাটছে সময়। এখন পর্যন্ত জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কোন ঔষধ পত্র বা কোন নগদ অর্থ দেয়নি কর্তৃপক্ষ তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহদেরকে নগদ ৫ হাজার টাকা দিয়েছে। এবং নিহত পরিবারের মাঝে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই ছেলের রোজগারেই সংসার চলতো কিন্তু এখন ছেলের চিকিৎস্যা চালাতে হচ্ছে ধার করে।

দুর্ঘটনায় নিহত মো. সাজ্জাদ হোসেন এর বোন বলেন আমি আমার ভাইকে হাড়িয়েছি লক্ষ টাকা দিলেও আমরা আমাদের ভাইকে ফিরে পাবো না। আমাদের একটা মাত্র ভাই অভাবি সংসারের একমাত্র উপার্যনকারী আমার ভাই। আমার বৃদ্ধ বাবা মা কে কে দেখবে এই বৃদ্ধ বয়সে। টাকার অভাবে আমাদের মানুষের বাসায় ভাড়া থাকতে হয়। যা একটা সম্বল ছিলো আমার ভাই অশালেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। নিহত সাজাদের পরিবারের দাবি এই বৃদ্ধ বয়সে একটা মাথা গোঝার ঠাই পেলে বাকি জীবনটা কোন রকম কাটাতে পারবো।

দূঘটনায় নিহত সাইফুল ইসলামের মরদেহ খুলনা বাঘের হাট চিলতমারি করিঘাটির মধ্যপাড়ায় নিয়ে যায় নিহতের ছোট ভাই ও মামা। দুর্ঘটনায় নিহত মো. সাইফুল এর ভাই সাদিকুর রহমান বলেন আমরা যে আর্থিক সহয়াতা পেয়েছি তা কিছু দিনের জন্য আমি ও আমার ভাই পরিবারের খরচ চালাতাম কিন্তু আমার ভাই এমন একটি দূঘটনায় মারা গিয়ে বাকি জীবনটা পরিবারের অনেক কষ্ট হয়ে যাবে।  

দুর্ঘটনায় নিহত মো. সাইফুল এর মামা হোসাইন আহমাদ বলেন এ ধরনের দূর্ঘটনা হলে কন্টাকটার গায়েব হয়ে যায়। এই সিস্টেমের পরিবর্তন আনা দরকার সব সময় দেখা যায় সরকারি ও বেসরকারী কাজে দুর্ঘটনা ঘটলে যাদের মাধ্যমে ঘটে তারা ঊধাও হয়ে যায়।

এর আগে চলতি বছরের ১০-ই আগস্ট খাগড়াছড়ি জেলা শহরের খবংপড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেইট ভেঙ্গে পড়ে মৃত্যু হয় এক শিশু শিক্ষার্থীর। নিমার্ণ কাজের ত্রুটির কারণেই ঘটে ওই দুর্ঘটনা। আর বিদ্যালয়ের ওই গেইটটিও নির্মাণ করা হয়েছিলো একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে। তবে সে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হলেও তা শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি।