ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪ |

EN

শেখ হাসিনা : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কন্যা

ইয়াসির আরাফাত (তূর্য) | আপডেট: বুধবার, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২

শেখ হাসিনা : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কন্যা
আশির দশকের কথা তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরোধীদলীয় নেতা। একদিন খ্যাতনামা কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সাথে আলাপচারিতার সময় শেখ হাসিনাকে তিনি ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করছিলেন। শেখ হাসিনা কবিকে প্রশ্ন করলেন, ‘আমি আপনার অনেক ছোট , আপনি আপনি করছেন কেন?’ তখন কবি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে জবাব দিলেন, ‘শেখ হাসিনা, আপনিই তো বাংলাদেশ।’

স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনের আত্মত্যাগের মধ্য বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে ৩০ লক্ষ শহীদ ও আড়াই লক্ষাধিক মা-বোনের জীবন সম্ভ্রমের বিনিময়ে ভিনদেশি পাকিস্তানি শোষণ থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছেন রাজনৈতিক স্বীকৃতি ও স্বাধীন আত্মপরিচয়। বঙ্গবন্ধু চিরকাল একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত আত্মনির্ভরশীল সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। পিতার লালিত স্বপ্নকে আজ বাস্তবে পরিণত করে চলেছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা ১৬ কোটি বাঙালির প্রাণের নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। 

বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাতা কালজয়ী ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি দেশের পরনির্ভরশীলতার তীব্র সমালোচনা করে তাঁর এক বক্তব্যে বলেন, 'ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকেনা। বিদেশ থেকে পয়সা এনে দেশকে গড়া যাবে না। দেশের মধ্যেই পয়সা করতে হবে।'

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুবিবেচিত দিক নির্দেশনাকে প্রাণে মনে উপলব্ধী করে অর্থনৈতিকভাবে বৈশ্বিক সাহায্যের প্রতি বাংলাদেশের অতিনির্ভরশীলতার চিরায়ত ধারাকে পরিবর্তন করার দুঃসাহসী স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছেন । বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি স্বাবলম্বী দেশে প্রতিষ্ঠিত করার প্রায় অসম্ভব স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল,মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পদ্মাসেতুর ন্যায় অগণিত বৃহৎ বা মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। এছাড়াও বিশ্বের একাধিক দরিদ্র দেশকে ঋণপ্রদান করে বাঙালি জাতির চিরকালের আরাধ্য সে অসম্ভব স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে এ জাতির আত্মমর্যাদাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফল ও স্বার্থকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশের ইতবাচক অগ্রযাত্রা ও সামগ্রিক অর্জনকে বাংলাদেশের দিন বদলের বিপ্লব বললেও অতিরঞ্জিত হবেনা।

এছাড়াও, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা শুধুমাত্র বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রসারণ ঘটিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি প্রতিবেশি দেশ ভারত ও মায়ানমারের কাছ থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী প্রায় আরেকটি বাংলাদেশের সমপরিমাণ সমুদ্রসীমা বিজয় করেন। ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের ছিটমহল সমস্যাটির সমাধান করেও বাংলাদেশের আরেকটি অকল্পনীয় বিপ্লবকে বাস্তবতায় পরিণত করেছেন বাংলার ইতিহাসের সফলতম রাষ্ট্রনায়ক প্রাণের নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। সকলের জ্ঞাতার্থে বলে রাখা ভালো যে, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পূর্বে বাংলাদেশের আয়তন ছিলো ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার, আর শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশের সিটমহল সমস্যা সমাধানের পর বাংলাদেশের আয়তন প্রায় ১ হাজার বর্গকিলোমিটার বেড়ে দাঁড়িয়েছ ১,৪৮,৪৬০ বর্গ কিলোমিটারে! সাধারণ চোখে যা ছিলো সুদূরপরাহত অকল্পনীয় বিষয়, যে দুঃসাহস পূর্বের কোন রাষ্ট্রপ্রধান দেখাতে পারেনি তাই সফলভাবে সম্পন্ন এবং বাস্তবায়ন করেছেন বাঙালি জাতির স্বপ্নজয়ের প্রমিথিউস বঙ্গবন্ধুকন্যা তথা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত শেখ হাসিনার স্বরচিত ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’ শীর্ষক গ্রন্থের ভূমিকাংশে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি রাজনীতি করি এদেশের মানুষকে ভালোবেসে। দেশের শহর, গ্রাম যেখানেই আমি সফরে যাই মানুষের দুঃখ কষ্ট মনকে দারুণভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে। প্রকৃতির কাছে মানুষ যেমন অসহায়,আবার গোষ্ঠী স্বার্থের কাছেও মানুষ কত অসহায় নিগৃহীত, শোষিত। আমার এ রাজনৈতিক জীবনে এসব ঘটনা যখন যেভাবে চোখে পড়েছে, অনুভব করেছি, সেভাবে লেখার চেষ্টা করেছি।’’

বাংলাদেশের আবহমান সমাজব্যবস্থায় পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা দ্বারা সুদীর্ঘকাল ধরে নিষ্পেষিত হয়ে আসা বাঙালি নারী সমাজকে পুনরুজ্জ্বীবিত করে তাদের রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির সাহসী আলোর মিছিলে নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আজ বাংলায় নারী-পুরুষের শিক্ষাগত বৈষম্য প্রায় নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে প্রথম নারী স্পিকার, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী উপাচার্য, মন্ত্রীপরিষদসহ দেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রতিটি অঙ্গনে নারী জাগরণের অনন্য দিকপাল হিসেবে যে অনবদ্য বিপ্লব ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনা তা ইতিহাসে অমলিন হয়ে থাকবে। যে সাহসের প্রমাণ কেউ রাখেনি আগে বছরের প্রথম দিন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই, শিক্ষা সরঞ্জাম তুলে দেওয়া, বিনামূল্যে দ্বাদশ শ্রেনি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বৃত্তি প্রদানের মত বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে। পাবলিক সার্ভিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনরূপ দলীয়করণকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্বচ্ছতার সাথে বিসিএস পরীক্ষা সহ সকল সরকারি চাকরির পরীক্ষাসমূহ আয়োজনের সংস্কৃতি প্রবর্তন করেছে শেখ হাসিনা সরকার। অথচ বিএনপি জামায় শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অনেক ঝক্কিঝামেলা শেষে মাত্র ১ বার বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাও বিএনপি দলীয় ক্যাডারদের মধ্যেও চাকরি সীমাবদ্ধ রাখা হতো। ভীতিকর যে তথ্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে তা হলো মধুরক্যান্টিন থেকে ছাত্রদল শিবির নেতাদের হাতে নাকি সব ভর্তি পরীক্ষা ও বিসিএসের প্রশ্নপত্র আগেই তুলে দেয়া হতো এবং বিএনপি জামাত নেতাদের হাতেই থাকতো রেডিমেইড বিসিএস ক্যাডার তৈরির সকল গুরুদায়িত্ব! অথচ এদেশের অগণিত মেধাবী গ্রাজুয়েটকে যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়নের মাধ্যমে সম্মানজনক চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার মত স্বদেশপ্রেমের নজির শেখ হাসিনার পূর্বে কোন রাষ্ট্রপ্রধান স্থাপন করতে সক্ষম হয়নি। 
প্রসঙ্গক্রমে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ভূমিহীন নাগরিককে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে  পাকা ঘর, দুই শতক জমি, গবাদিপশু সহ নগদ অর্থ প্রদান করেছেন। এ দৃষ্টান্ত বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধুকন্যার ন্যায় বিশ্বের অন্যকোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এত বিপুল সংখ্যক সহায় সম্বলহীন নাগরিককে বিনামূল্যে ঘর,জমি ও অর্থ প্রদান করে পুনর্বাসিত করার দুঃসাহস দেখাতে পারেনি। তাছাড়াও, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মায়ানমার থেকে বিতাড়িত প্রায় ১২ লক্ষ অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে অনন্য মানবতাবাদি দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় বিশ্ববাসী শেখ হাসিনাকে বিশ্ববিবেক বা মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধিতে ভূষিত করেছেন।

পিতামাতা,আদরের ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল ও তাঁর নবপরিণীতা স্ত্রী জাতীয় এথলেট সুলতানা কামাল ,বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ জামাল ও তাঁর স্ত্রী রোজী জামাল এবং প্রাণপ্রাচুর্যের অমিত সম্ভাবনার দেবশিশু শহীদ শেখ রাসেল সহ নিকট আত্মীয় পরিজন সবাইকে হারিয়ে সর্বহারা শেখ হাসিনা একমাত্র সহোদরা শেখ রেহানাকে নিয়ে তাঁর সংগ্রামী জীবনে অজস্র প্রতিকূলতার শ্বাপদসঙ্কুল পথ অতিক্রম করে পিতার স্বপ্নকে আজ বাস্তবে পরিণত করে চলেছেন । স্বপ্নজয়ের এ অদম্য যাত্রায় এক অবিনাশী ধ্রুবতারা হিসেবে তিনি আলোকিত করে চলেছেন বাংলার প্রতিটি ঘরকে।  জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাকারী একাত্তরের পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও সামরিক স্বৈরাচারের দীর্ঘ দুর্বৃত্তায়িত দুঃশাসনে আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে ছিটকে পড়া দুর্ভাগা পিতৃহীন এতিম জাতির ঘুরে দাড়ানো ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবার লক্ষ্য নিয়ে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। 'শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ' স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে বাংলাদেশ আজ শতভাগ বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় এসেছে। গহীন পাহাড়ি আরণ্যক জনপদ থেকে শুরু করে সুদূরের বালুকাময় দ্বীপেও বিদ্যুতের আলো পৌছে দেয়ার নেপথ্য কারিগর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের জাতীয় সক্ষমতার এ বৈপ্লবিক অর্জনের সুফল ভোগ করবে এদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। 

প্রসঙ্গক্রমে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে মূল্যায়ন করে উল্লেখ করেন, "বর্তমানে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নতি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির মতো বিষয়গুলো এ দেশের মানুষের সামনে নতুন নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে।"

বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজ সচেতনভাবে এ রাষ্ট্রের সামগ্রিক ইতিহাস পর্যালোচনার মাধ্যমে বিচারবুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যে, সত্যিকার অর্থেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তন ও অর্জনের অভাবনীয় বিপ্লব ঘটে গেছে। মহাকাশে লালসবুজের পতাকা, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল,গভীর সমুদ্রবন্দর,বাংলাদেশে প্রাইভেটকার উৎপাদন, দেশব্যাপী ইপিজেড স্থাপন, প্রতিটি বিভাগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহুমুখী উন্নয়নযজ্ঞ সবই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একেকটি বিপ্লবের সমান।

শেখ হাসিনা পরিবারের সবাইকে হারানোর মর্মবেদনার পাথরবিদ্ধ হৃদয় নিয়ে বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছিলেন। বাংলা মায়ের অদম্য সাহসী সন্তান শেখ হাসিনা সামরিক স্বৈরাচারের বন্দুকের নলকে পদদলিত করে মা, মাটি ও কোটি মানুষের মলিনমুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন নিয়ে, পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় শপথ নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তারিখে মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন বাংলার কোটি মানুষ অকৃত্রিম অনুরাগে আবাহন করে নেয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারকে । 

বাংলার আপামর মানুষ যখন সার্বিকভাবে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, তখন গণমানুষের অধিকার আদায়ের মুখপাত্র হিসেবে রাজপথে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই শেখ হাসিনা যে অভূতপূর্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে সম্মানিত করেছে নিঃসন্দেহে তা দেশ ও জাতির জন্য গৌরবের।  বাংলাদেশকে একসময় 'তলাবিহীন ঝুড়ি' বলে কটাক্ষ করা বিশ্বমোড়ল রাষ্ট্রগুলোও বাংলার অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অর্জনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এমনকি বাঙালির জন্মশত্রু পাকিস্তানের সাংসদরাও তাদের সংসদে মিনতি করে বলেন, 'আল্লাহর ওয়াস্তে আগামী ১০ বছরের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশের মতো বানিয়ে দাও।'


সম্প্রতি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পূর্ণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে 'Crown Jewel (মুকুট মনি)' উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এই অধিবেশনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জেফ্রি ডেভিড স্যাক্স গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উল্লেখ করে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সঙ্গে একসাথে হতে পেরে আমরা আনন্দে উদ্বেলিত। আমরা আপনার কথা শুনতে চাই, বিশেষ করে এই জন্য যে, আমরা যখন পৃথিবীর দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের অগ্রগতি বিশ্লেষণ করি যা প্রতিবছর জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সমাধান নেটওয়ার্ক করে থাকে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অগ্রগতিতে বিশ্বে প্রথম হয়েছে। তাই আমরা সেই অর্জনের জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাতে চাই।” 

শেখ হাসিনার জীবন সংগ্রামকে বিবেকবোধ দ্বারা বিচার করলে উপলব্ধি করা যায় যে তিনি কেমন করে বেঁচে আছেন! তিনি কি কারণে শত সহস্র গ্রেনেড বিছানো পথে হেটে রাজনীতি করে চলেছেন। পিতা মাতা আত্মীয় পরিজন সবাইকে হারিয়ে এমন কি  আছে যা পাওয়ার আশায় সামরিক সন্ত্রাসের বুলেট উপেক্ষা করে তিনি প্রবাস থেকে পিতার এনে দেওয়া বাংলাদেশে আর বাংলার গণমানুষের কাছে ফিরে এসেছেন। তিনি কি নিজের প্রয়োজনে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন? শেখ হাসিনার মতো একজন সর্বস্ব হারানো মানুষের ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কি ই বা থাকতে পারে! কবিগুরুর ভাষায় তাই শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলতে হয় , 
‘তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী,
আমি অবাক হয়ে শুনি,
কেবল শুনি।
সুরের আলো ভুবন ফেলে ছেয়ে
সুরের হাওয়া চলে গগন বেয়ে
পাষাণ টুটে ব্যাকুল বেগে ধেয়ে
বহিয়া যায় সুরের সুরধুনী
তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী’(১)

প্রসঙ্গক্রমে, ধরুন আপনার আমার একমাত্র অবলম্বন পিতা-মাতা ভাই ও নিকট আত্মীয়দেরকে কোন এক দেশে নির্মমভাবে হত্যা কয়েছে এবং ঘাতকগোষ্ঠী সেদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছে। এমতাবস্থায় কি আপনি আমি বা যে কেউ সেই দেশটিতে ফিরে যাওয়ার দুঃসাহস দেখাতে পারতেন? আবার সেখানে সক্রিয় রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেয়া ও নেতৃত্ব দেয়ার মত হিম্মত কি সকলের আছে? এদিকে শুধু গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়ার ভয়ে গত ১৬ বছর ধরে লন্ডনে পলাতক রয়েছে এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ,জানমালে অগ্নিসংযোগ ও একাধিক দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বেগম জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূলহোতা পলাতক আসামী তারেক রহমান! অথচ বাংলাদেশে তার গর্ভধারিনী মা ও জনগণ রয়েছে। জননী জন্মভূমির কিংবা দেশের নেতাকর্মী জনগণের জন্য ন্যূনতম ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা অনুভব করলে সে কি এতদিনে সব ঝুঁকি মোকাবিলা করে দেশে ফিরে আসতোনা? বাংলাদেশের জনগণ অবশ্য বহুকাল আগেই বুঝে গিয়েছে যে বিএনপি এ বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের প্রতি কোন দায়বদ্ধতার জন্য রাজনীতি করেনা। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে খুন করে ১৯৭৮ সালে সামরিক সন্ত্রাসের ছত্রছায়ায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আই এর গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া বিএনপি নামক দলটি সৃষ্টি হয়েছিলো বাঙালি জাতির উপর ১৯৭১ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার উদ্দেশ্যে । স্বাধীন এ জাতিকে শাসন ও শোষণ করার হীন পায়তারা বাস্তবায়নই যে বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তা ইতিহাস সচেতন শিক্ষিত তরুণ সমাজ অনেক আগেই বুঝতে পেরেছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ এর ভয়াল নৃশংস ১৫ আগস্ট পরবর্তি জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবাকে উপলব্ধি করে শেখ হাসিনা তাঁর, '৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমার সব স্বজন, সব আপন, সব বন্ধনই যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। আমি আর আমার ছোটবোন রেহানা তখন জার্মানিতে। সেসময় সেখানে ছিলো আমার স্বামীর কর্মস্থল। সেই প্রবাসে বসেই সংবাদ পেলাম দীর্ঘ তিন দশকের(৩০ বছর) বাঙালি প্রতিবাদের সোচ্চার কণ্ঠস্বর বঙ্গবন্ধু, আমার বাবা শেখ মুজিব নেই! নেই আমার তিন ভাই, নব পরিনীতা দুটি বধূ, আমার স্নেহময়ী মা, আর পরিবারের অন্য স্বজনরা! নেই কর্নেল জামিল! এ শোকের বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রিয় পাঠক, আমার এ দৈন্য ক্ষমা করুন।(২)

আধুনিক বাংলাদেশ ও আধুনিক বাঙালি জাতির সার্বিক অগ্রযাত্রার অদম্য শক্তির আধার বঙ্গবন্ধুকন্যা কোটি বাঙালির প্রাণের নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ তারিখে বাঙালি জাতির প্রাণের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর সার্বিক সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে জানাই প্রাণসিক্ত শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সংগ্রামী অভ্যর্থনা। 

মহান পিতার মহান কন্যা
প্রাণের নেত্রী শেখ হাসিনা,
দিন বদলের নেত্রী তুমি
বাংলা মায়ের শেষ ঠিকানা।

রেফারেন্স সমূহ:
(১)তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী কবিতা, গীতাঞ্জলি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,১৯১০;

(২) একানব্বইয়ের ডায়েরি থেকে, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, শেখ হাসিনা পৃষ্ঠা:৮৬-৮৭, ১৯৯৩।