পৃথিবীর ইতিহাসে যে ক'জন নারী শাসককে নিয়ে হয়েছে সবচেয়ে বেশি আলোচনা, তাদের মধ্যে অন্যতম রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে বলিষ্ঠ হাতে পরিচালনা ও আধুনিকায়নের আওতায় এনে দ্রুতগামী পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। হীরক জয়ন্তী উদযাপনের পর ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পিতামহী রানী ভিক্টোরিয়ার রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসক হওয়ার খেতাব অর্জন করেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার মৃত্যুতে শোকাহত পুরো বিশ্ব।
রাজা ষষ্ঠ জর্জ ও এলিজাবেথ বোয়েস-লিয়ন এর ঘর আলোকিত করে ১৯২৬ সালের ২১শে এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন এলিজাবেথ আলেকজান্ডার মেরি।
১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর গ্রিক ও ডেনমার্কের প্রাক্তন রাজপুত্র ডিউক অফ এডিনবরা ফিলিপের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এরপর ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাবা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর ঐ বছরের ২রা জুন রানী হিসেবে বিট্রিশ সিংহাসনের পদভার গ্রহণ করেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
তিন ছেলে ও এক মেয়ের জননী এলিজাবেথের প্রথম সন্তানের নাম যুবরাজ চার্লস (৭৩) ( বিট্রিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী)। বাকি তিনজন হলেন, রাজকুমারী অ্যান (৭২), যুবরাজ অ্যান্ড্রিউ (৬২) ও যুবরাজ এডওয়ার্ড (৫৮)।
জীবদ্দশায় এলিজাবেথ কমনওয়েলথের প্রধান ও সাতটি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রেজিমেন্টের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক সংস্থার দায়িত্ব পালন করলেও তাকে ঘিরে রয়েছে চমকপ্রদ কিছু তথ্য। ভারতীয় উপমহাদেশ হতে বিট্রিশ উপনিবেশ সরিয়ে নেওয়ার বছর পাঁচেক পর বিট্রিশ সিংহাসনে আরোহন করা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ গাড়ি চালানোর জন্য ব্যবহার করতেন না ড্রাইভিং লাইসেন্সে এর। এমনকি পৃথিবীর যেকোনো দেশে পাসপোর্ট ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারতেন তিনি। অর্থের জন্য তার কাছে সবসময় থাকতো প্রাইভেট ক্যাশ মেশিন। আরও একটি বিস্ময়কর বিষয় হলো, রানির বিরুদ্ধে চাইলেও কেউ কখনো পারতেন না মামলা দায়ের করতে। এরকম অনেক সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্বেও তার ছিলো কিছু সীমাবদ্ধতা। যেমন, তিনি চাইলেও নিজের পছন্দের কিছু খেতে পারতেন না। এমনি চিংড়ি, পেঁয়াজ, আদা,ট্যাপের পানি তিনি ও রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য ছিলো প্রায় একপ্রকার নিষিদ্ধ।
নিজ শাষণ আমলে নাতি ও নাতবউ মেগানকে রাজপরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করাসহ বেশ কয়েকটি বিতর্কিত বিষয়ও তার দ্বারা সংগঠিত হয়। তবে রাষ্ট্র তথা রাজ্য পরিচালনায় এসব সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেও নিয়েছেন অনেকে।
সবকিছু ছাপিয়ে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন একজন দূরদর্শী ও প্রজামুখী শাসক।তার দীর্ঘ সময়ের শাষণ আমলে প্রজাদের কষ্ট হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিজের জ্ঞাতসারে নিতে দেখা যায়নি তাকে। এমনকি বিট্রিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনেও ক্ষমতা বহির্ভূত ভাবে কাউকে সমর্থনও দেননি তিনি। রাজপরিবারের ভোট দান ও সমর্থনের নিষিদ্ধতার বিষয়েও তিনি রীতি পরিবর্তন করেননি। সব সময় ভেবেছেন প্রজাদের কথা। এমন এক শাসককে হারিয়ে শোকাহত ইংল্যান্ডসহ পুরো বিশ্ব।