শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের কাশিখন্ড এলাকায় ৩ লাখ টাকা যৌতুক না দেওয়ায় তিন মাসের গর্ববতী নববধু সাবিনা ইয়াসমিন(২০)কে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি গত শুক্রুবার সাবিনাকে তার স্বামী ও শাশুড়ি ও বোন মিলে খুন করেছে বলে দাবী বাবা কাঞ্চন গাইনের। গত বৃহস্পতিবার মৃত ঐ নববধূর বাবা কাঞ্চন গাইন বাদী হয়ে শরীয়তপুর জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১১(ক)/৩০ ধারা(যৌতুকের দাবীতে মারপিট করিয়া হত্যার অপরাধে পাঁচজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর থেকেই আসামীরা পলাতক রয়েছে।
মামলায় আসামীরা হলেন, স্বামী শাহাদাত হোসেন রাজিব সরদার(২৮),শাশুরি মা রোকেয়া বেগম (৫০),ননদ কাকুলী বেগম(১৯),নাজমুল হোসেন রাড়ী(৩৩),পান্টু আহমেদ মাঝি (৪৫)।
মামলার এজাহার সুত্র জানায়,ছয় মাসেই সুখের সংসারের ইতি হলো সাবিনার। তবে এর মধ্যে সে তিন মাসের গর্ভবতী ছিলো। তিন মাস পর থেকেই হলো সংসারে বাধা বিপত্তি। রাজিব ও তার মা তার স্ত্রী সাবিনার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় সাবিনাকে শারীরিক নির্যাতন চালায়। বিষয়টি নিয়ে সাবিনার বাবা একাধিকভাবে ঐ এলাকার ইউসুফ ঢালীকে নিয়ে শালিসে সমাধান করার চেষ্টা করেছে। তবে নির্যাতনের কাল রুপ থেমে নেই। গত ২৬ আগষ্ট সাকাল থেকেই সাবিনাকে বেধম মারধর করে তার স্বামী। পরে সন্ধা ৭ টার সময় কাঞ্চনকে ফোন দিয়ে রাজিব বলেন আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কাঞ্চন গাইন তাৎক্ষনিক এসে বিছানায় সাবিনাকে মরে শুয়ে থাক
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের কাছে জানা যায়,মাত্র ৬ মাসের সংসার সাবিনা - রাজিব দম্পতীর। তার এক মাস পেরুতেই বিপত্তি বাধে ৩ লাখ টাকা যৌতুকের দাবী নিয়ে। সাবিনার শাশুড়ির কড়াকড়ি আদেশ ছিলো তুর বাপের থেকে টাকা এনে দিবি তা না হলে তুকে মেরে ফেলবো। সাবিনা তার বাবার কাছে বিষয়টি জানালে তার বাবা কাঞ্চন এসে বলেন আমি টাকা দিবো আমাকে কিছুদিন সময় দিন।টাকা না দিতে পারায় সাবিনাকে কিছুদিন পরপরেই টাকার জন্য মারধর করতো। এবং গত ২৬ আগষ্টেও রাজিবের বউকে দুপুর থেকেই মারধর করেছিলো। পরেই এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে বলে ধারনা এলাকাবাসীর। তবে এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা? বলছেন সচেতন মহল।
প্রত্যক্ষদোর্ষী হানিফ মৃধা(০৮) বলেন, আমি সেইদিন স্কুল ছুটির পরে রুহুল আমিন দাদার দোকানে বসেছিলাম। পরে রাজিব কাকার বাড়িতে গিয়ে দেখি তার বউ সাবিনাকে মারধর করতাছে। আমি দেখতে গিয়েছি বলে আমাকে তাড়িয়ে দেয় তা মা। পরে দেখলাম তারা তিনজন মিলে সাবিনার মাথা মোচর দিয়ে ঘাড় ভেঙ্গে ফেললো।পরে সাবিনা মাটিতে পড়ে গেলো। তারপরে তারা তিনজন মিলে তাকে নিয়ে দক্ষিন পাশে ছোট ঘড়ে নিয়ে যায়। আর তারা তিনজন বলাবলি করছে সাবিনা আত্নহত্যা করেছে বলবি। তা না হলে আমরা জেলে যাবো।
ইউসুব ঢালী বলেন, ১৫ দিন আগে সাবিনার বাবা কাঞ্চন গাইন আমার কাছে আসে এসে বলে আমার মেয়েকে ওর শাশুড়ি মারধর করে এবং আংটি ও খাট পালং কিনে দিতে বলে।আবার ৩ লাখ টাকা নগদ যৌতুক দাবি করে। পরে আমি দুই পরিবারকে নিয়ে বসে রাজিব ও রাজিবের মাকে বুঝিয়ে দিয়েছি। পরে শুনি দিন পনের পরে আবার সাবিনাকে মারধর করে মেরে ফেলে। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যার নাটক করেছে। আমি চাই দোষীদের উপযুক্ত সাজা হউক।
এবিষয় গোসাইরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিপন সরদার বলেন, এই ঘটনার তিব্র নিন্দা জানাই। এবং এখন যদি এই ঘটনার দোষীদের সাজা না হয়। তাহলে এলাকায় স্বামী ও শাশুড়ির হাতে স্ত্রীর উপর নির্যাতনের ঘটনায় বন্ধ হবে না।
এব্যাপারে গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন জানান,গত ২৬ আগষ্ট শুক্রুবার গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আমরা সাবরিনার লাশটি উদ্ধার করি। থানায় একটি (ইউডি) মামলা করা হয়।পরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর জেলা মর্গে পাঠানো হয়েছে।রিপোর্ট আসলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোর্টে মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষ আইননুসারে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।