ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: বুধবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
ঘরে
বসে নিশ্চিতে পছন্দের রেস্টুরেন্টে খাবার পেতে ‘ফুডপান্ডায়’ অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে
অর্ডার করেন নারায়ণগঞ্জের শফিকুল
ইসলাম। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও
খাবার না পেয়ে অ্যাপসে
ঢুকে তার চোখ ছানাবড়া!
কারণ ফুডপান্ডার অ্যাপসে তার খাবার ডেলিভারি
সম্পন্ন হয়েছে এমন তথ্য দেখেন
শফিকুল। পরে তিনি ফুডপান্ডার
ওয়েবসাইটে ঢুকে অভিযোগ করেন।
কিন্তু সমস্যার সমাধান তো দূরে থাক,
অভিযোগের কোনো জবাবও দেয়নি
প্রতিষ্ঠানটি।
ফুডপান্ডার
বিরুদ্ধে টাকা পরিশোধ করেও
খাবার না পাওয়ার অভিযোগ
শুধু শফিকুলেরই নয়। এমন অসংখ্য
অভিযোগ জমা পড়ছে জাতীয়
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। এছাড়া ফুডপান্ডার ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটেও
প্রতিনিয়ত এমন অভিযোগ করছেন
ভোক্তারা। তবে সবার অভিযোগের
জবাবে ফুডপান্ডা দুঃখ প্রকাশ করে
সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েই ক্ষ্যান্ত থাকছে। ফলে ক্রমেই বাড়ছে
গ্রাহকদের ক্ষোভ। আস্থা হারাচ্ছে ফুডপান্ডা।
সম্প্রতি
ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয়টি
সামনে আসে। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার
করা হয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিককে। এই অবস্থায় ফুডপান্ডাসহ
অনলাইনে খাবার সরবরাহকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগও সামনে আসতে শুরু করেছে।
নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জের আরেক বাসিন্দা বলেন,
‘বাসায় কিছু খাবারের প্রয়োজনে
প্রথমে আমি প্রায় সাড়ে
তিনশ টাকার মতো খাবার পছন্দ
করি। কিন্তু এর আগে কখনো
অর্ডার করিনি, তাই সন্দেহের কারণে
৪৬ টাকার অর্ডার করি। অর্ডারের পর
বিকাশে পেমেন্ট করি। ফুডপান্ডা আমার
অ্যাকাউন্ট থেকে ভ্যাটসহ ৪৭
টাকা ৭৩ পয়সা কেটে
নেয়।’
এই
গ্রাহক বলেন, ‘৮টা ২৫ মিনিটে
অর্ডার করার পর বলা
হয় ২৫ মিনিটের মধ্যে
খাবার ডেলিভারি দেবে। পরে বাসা থেকে
বের হয়ে অপেক্ষায় থাকলেও
সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কেউ
খাবার নিয়ে আসেনি। পরে
রাগ করে বাসায় গিয়ে
অ্যাপসে ঢুকে দেখলাম খাবার
ডেলিভারি হয়ে গেছে। এ
নিয়ে ওয়েবসাইটে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো রিপ্লে পাইনি।’
খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, গত
কয়েক মাস ধরে ফুডপান্ডাসহ
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকারে হাজার হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। লোকবল
সংকটের কারণে অভিযোগের চাপে অনেকটা দিশেহারা
প্রতিষ্ঠানটির কর্তা ব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্ট
সূত্রে জানা গেছে, গত
কয়েক মাসে ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে
ভোক্তা অধিকারে ৩২২টি অভিযোগ জমা হয়। ইতিমধ্যে
২৫১টি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে অধিদপ্তর সূত্রে
জানা গেছে। সে হিসেবে অভিযোগ
নিষ্পত্তির হার ৭৮ শতাংশ।
এদিকে
ফুডপান্ডার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেখা গেছে,
প্রতিদিন অনেক গ্রাহক খাবার
অর্ডার করে টাকা দিয়েও
খাবার না পাওয়ার অভিযোগ
করছেন। এতে চরম ভোগান্তি
পড়েছেন গ্রাহকরা।
মাসুদ
রানা নামের একজন ফুডপান্ডার পেজে
অভিযোগ করেন, ‘`আমি আপনাদের সার্ভিস
পাই না। চারবার অর্ডার
করছি, কিন্তু ডেলিভারিম্যান আমাকে বলে আমি বাইক
থেকে পড়ে গেছি, আর
বলে আমি আপনার খাবারটা
খেয়ে ফেলছি।‘
সাইদুর
রহমান সোহাগ নামের এক গ্রহীতা লিখেছেন,
‘ফুডপান্ডায় বিকাশে পেমেন্ট করে ইভ্যালির মতো
অভিজ্ঞতা হল। পেমেন্টের টাকা
ঠিকই নিয়ে নিছে কিন্তু সুন্দরভাবে
অর্ডারটা ক্যান্সেল করে দিয়েছে পরপর
দুবার।‘
মো.
ওমর ফারুক লিখেছেন, ‘ফুডপান্ডা সময় এত কম
দিয়েছে যে, টাইম শেষ
হয়ে গেছে। অর্ডার ক্যান্সেল, টাকাও মাইর।‘
মো.
সজীব বিল্লাহ লিখেছেন, `খাবার অর্ডার করলাম, বিকাশ থেকে পেমেন্ট ও
করলাম, কিন্তু দিলো না। এটা
কেমন কথা?‘
লাবণ্য
আক্তার নামে একজন ফুডপান্ডায়
এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে লিখেছেন, ‘এটা
কোনো কথা, খাবার অর্ডার
করলাম বিকাশে বিলও পরিশোধ করলাম,
কিন্তু দিলো না?‘
তবে
অবাক করা বিষয় হলো-
এত গ্রাহকের আলাদা আলাদা অভিযোগের বিষয়ে সবাইকে ফেসবুকে একই ধরনের জবাব
দিয়েছে ফুডপান্ডা। সবার অভিযোগের পরে
রিপ্লে দেওয়া হচ্ছে- ‘আপনার এরকম অভিজ্ঞতার জন্য
আমরা দুঃখিত। আমরা সবসময় আমাদের
গ্রাহকদের সবচেয়ে ভালো সেবা দেওয়ার
চেষ্টা করি। তারপরও কিছু
সমস্যা হয়ে গেলে তার
জন্য আমরা ক্ষমা চাচ্ছি।
খাবার বা সেবা সম্পর্কে
যেকোনো অভিযোগ আমাদের জানাতে আমাদেরকে ইনবক্সে বিস্তারিত বলুন। ধন্যবাদ।’
এসব
অভিযোগের বিষয়ে ফুডপান্ডা বাংলাদেশের পিআর জনসংযোগ বিভাগ
দেখভালের দায়িত্বে থাকা এজেন্সি ফোরথট
পিআর লিমিটেডের পক্ষ থেকে অভিযোগকারী
গ্রাহকদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়।
এ বিষয়ে তারা সরাসরি তথ্য
দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
সুত্র:
ঢাকা টাইমস