ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪ |

EN

২১'শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং টার্গেট শেখ হাসিনা

কলাম ডেস্ক | আপডেট: রবিবার, আগস্ট ২১, ২০২২

২১'শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং টার্গেট শেখ হাসিনা
২১শে আগস্ট ২০০৪, ঠিক ১৮ বছর আগে দেশবাসী সাক্ষী হয় এক অমানবিক, নিষ্ঠুর,পাশবিক এবং বর্বরোচিত হামলার। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ওই গ্রেনেড হামলা ছিল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত। 


২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ওই ঘটনা স্তব্ধ করে দিয়েছিল জাতিকে।সেদিন দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভয়ঙ্কর এক সন্ত্রাসের শিকার হন,যার মূল লক্ষ্য ছিলেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তখন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। বিএনপি সরকারের সন্ত্রাস-দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল।একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশ চলছিল। সেদিনের অভিশপ্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শেখ হাসিনা বিকাল পাঁচটার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান। বুলেটপ্রুফ গাড়ি থেকে নেমে নিরাপত্তাকর্মী ও দলীয় নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত অবস্থায় তিনি অস্থায়ী মঞ্চে ওঠেন।

আওয়ামীলীগ সভানেত্রী তার বক্তব্য শেষ করার সাথে সাথে এক এক করে ১৩টি গ্রেনেড হামলা করা হয় তাকে উদ্দেশ্য করে। ট্রাকের উপর তখন দলীয় নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় মানবঢাল তৈরি করে তাকে রক্ষা করেছিলেন। যদিও শেষ রক্ষা হয় নি অনেকের। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীসহ ২৪ জন ওই ঘটনায় নিহত হন এবং শত শত নেতা কর্মী আহত হন। সেদিনের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট মারা যান। প্রায় দেড় বছর পর মৃত্যু হয় ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে।২১ আগস্ট হামলায় নিহত অন্যরা হলেন শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান, হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম , রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। একজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। ছিন্নভিন্ন লাশ, বিস্ফোরণের শব্দ, আহতদের আর্তনাদ, রক্তাক্ত নেতা-কর্মীদের ছুটোছুটিতে সেদিন ওই এলাকা হয়ে উঠেছিল বিভীষিকাময়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যেন বাঁচতে না পারেন, তার সব চেষ্টাই সেদিন করেছিল হামলাকারীরা।

তার গাড়ির কাচে কমপক্ষে সাতটি বুলেটের আঘাতের দাগ, গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের চিহ্ন আর পাংচার হয়ে যাওয়া গাড়ির চাকা সে কথাই প্রমাণ করে।তিন স্তরের বুলেট নিরোধক ব্যবস্থার গাড়িটিই শেখ হাসিনার প্রাণ বাঁচিয়েছিল সেদিন।গ্রেনেড হামলার পরপরই নিরাপত্তাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে ঘিরে ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে যান। আর তখনই গাড়ির সামনের জানালা লক্ষ্য করে অনেকগুলো গুলি ছোড়া হয়। দেহরক্ষী মাহবুব গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই মারা যান। শেখ হাসিনা গাড়িতে ওঠার পরপরই পেছন থেকে বাঁ দিকের সিট লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। সব শেষে চাকা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করে হামলাকারীরা।

কিন্তু চালক মোহাম্মদ আব্দুল মতিন সচিবালয়ের সামনে দিয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে শহীদ মিনার, পলাশী, নিউ মার্কেট হয়ে পিলখানার ভেতর দিয়ে নিরাপদেই ধানমণ্ডিতে সুধা সদনে পৌঁছে দেন শেখ হাসিনাকে।

এঘটনায় ক্ষমতাসীন দল বিএনপি পন্থী ডাক্তারদের ফোরাম থেকে শুরু করে পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা সেই সময় ডাক্তারগণ তাদের নিয়মিত দায়িত্বে না থেকে হাসপাতালে অনুপস্থিত ছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে সহায়তার পরিবর্তে উলটো লাঠিচার্জ শুরু করে। আহতদের হাসপাতালে নিতে পুলিশ সাহায্য করেনি, উল্টো বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের নির্বিচারে লাঠিপেটা করে এবং টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে স্বাধীনতার বিরোধী পক্ষ, দেশীয় ঘাতকচক্র যেভাবে জাতির পিতা ও তার পরিবারকে হত্যা করে তাদের উদ্দ্যেশ্য বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল ঠিক তারই পুনরাবৃত্তির উদ্দেশ্যে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ভয়াল,নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তবে তাদের উদ্দেশ্যে সফল হয় নি কেননা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। এই মানুষটিকে মারার জন্য ১৯ বার হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। যার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলা। কিন্তু তাদের এই মিশন ব্যর্থতায় রুপ নেয়। সেদিন যে মানুষটিকে হত্যা করতে চেয়েছিল সেই শেখ হাসিনা আজ তার দক্ষ নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। সকল অপশক্তির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, দেশি-বিদেশি সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজ সাহসিকতা এবং দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে।

মামুন হোসেন আগুন 
কলামিস্ট ও সংস্কৃতিকর্মী,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
ঢাকা কলেজ,ঢাকা।