ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪ |

EN

১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্ত করা হয়েছিলো

সিয়াম মাহমুদ, বিশেষ প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, আগস্ট ১৫, ২০২২

১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্ত করা হয়েছিলো
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, হাজার বছরের বহমান জাতীয় সংষ্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়। উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও অসহিষ্ণুতার রাজনীতি শুরু হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করতে কুঠারাঘাত করা হয় অর্থনৈতিক সংষ্কার পরিকল্পনাগুলোতে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারী সরকারগুলোর সঙ্গে রাতারাতি পাকিস্তানি জান্তা ও উগ্রবাদী কিছু রাষ্ট্রের অভিনব সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানেই সোনার বাংলার অগ্রযাত্রাকে রুখে দেওয়া। আর তাঁর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে পারলে, পুরো বাংলাদেশকেই নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেওয়া যাবে। খুনিরা সেই চিন্তা করেই ১৫ আগষ্ট ঘটিয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সোনার বাংলাকে ধ্বংস করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা ঠান্ডা মাথায় কুকর্মগুলো সম্পন্ন করেছে। 

১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর। এক নতুন সকাল, নতুন বাংলাদেশের সূর্যোদয় হয়েছিলো। দীর্ঘ ২৩ বছরের লাঞ্চনা, বঞ্চনা, অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে বীর বাঙালিরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। অতঃপর পাকিস্তান থেকে মুক্ত হওয়ার পর ১০ ই জানুয়ারি তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে ফিরলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। এরপর তিনি হাল ধরলেন, কোষাগার শূন্য যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামসরা দেশের ৪৩ লক্ষ বসতবাড়ি, ৯ শত সরকারি ভবন, ১৮ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬ হাজার হাই স্কুল ও মাদ্রাসা, ৯ শত কলেজ ভবন, ১৯ হাজার গ্রামীণ হাঁট-বাজার জ্বালিয়ে দেয়। দেশ ওই সময় বিপর্যস্ত। অর্থনীতি বলতে কিছু ছিল না। যোগাযোগব্যবস্থা অপ্রতুল। শিল্প উৎপাদন প্রায় নেই। নেই কাঁচামাল বা খুচরা যন্ত্রাংশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পূর্ণবাসন ও পূর্ণগঠনের দায়িত্ব নেই, বঙ্গবন্ধু সরকার। কৃষি খাতে উন্নয়ন, সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগের উন্নয়ন, পাঁচশালা পরিকল্পনা, বৈদেশিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তণ, চতুর্থ শিল্প বিল্পব সহ নানা গঠণমূলক কার্যক্রম। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করতে বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় লেগেছিলো প্রায় ১১ মাস। অথচ, ভারতের গণপরিষদ সংবিধান রচনা করতে ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন সময় নিয়েছিল এবং পাকিস্তানের লেগেছিলো প্রায় ২৬ বছর। 

যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে ৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত আর কখনও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত “বঙ্গবন্ধু ‘বেঁচে থাকলে’ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ কতদূর যেত?” শীর্ষক অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আলোচকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে ১৯৯৪-৯৫ সালেই মাথাপিঁছু জিডিপিতে মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেতো বাংলাদেশ। তিনি জীবিত থাকলে ২০১১ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয় দাঁড়াত ৪২ হাজার ৫১৪ কোটি ডলার। ওই সময় মালয়েশিয়ার মোট জাতীয় আয় ১৫ হাজার ৪২৬ কোটি ডলার। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে ১৯৭৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত গড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কারণে ১৯৭৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৬ বছরে দেশের অর্থনীতির পুঞ্জিভূত ক্ষতির পরিমাণ ৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার।
 
কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে থেকে বঙ্গবন্ধুকে ডিঙিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারার দুঃখে পাকিস্তানি মতাদর্শী দেশীয় দোসররা এক হয়ে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আঁকতে থাকে। একে একে তিন তিন বার (১৯৭৪ সালের ২২ জানুয়ারি, ১৯৭৫ সালের ২১ মে ও ১৪ জুন) বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশে হামলা করা হয়। বারবারই তারা ব্যর্থ হয়েছিলো। এরপর ১৫ আগষ্ট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে ঘাতকের গুলিতে নিহত হন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্ত:সত্তা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খান।

সেদিন (১৫ আগস্ট ১৯৭৫) বিবিসি বাংলায় ছাপা হয়েছিলে, "শেখ মুজিব নিহত হলেন, তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে। অথচ, তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানিরা সংকোচবোধ করেছে।"

ব্রিটিশ এমপি জেমসলামন্ড বলেছিলেন, "বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে। "

নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট বলেছিলেন, মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনও জঘন্য কাজ করতে পারে।

সেদিন স্বাধীন বাংলাদেশের সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো। ১৫ ই আগষ্টের পরপরই স্বাধীন বাংলাদেশকে তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য হাত দেওয়া হয় বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্র ও স্বৈরশাসকরা প্রথমেই ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে পাকিস্তানি কায়দায় উর্দু শব্দে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’-এর প্রচলন করেন। যেই স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে বাঙালিরা দেশ স্বাধীন করেছিলো, সেই "জয় বাংলা" স্লোগানকে অবরুদ্ধ করা হয়েছিলো। 'বাংলাদেশ বেতার' এর নাম পরিবর্তন করে 'রেডিও বাংলাদেশ' করা হয়। সংবিধানের মূলনীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে একে সাম্প্রদায়িক চেহারা দেওয়া হয়। বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়। ৭১-এর যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদরদের পুনর্বাসন করা হয়। হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পাকিস্তান রেডিও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খবর জানানোর পাশাপাশি গৌরবের সঙ্গে প্রচার করেছিল, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নাম বদলে ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ হয়েছে।’ যদিও তা পরবর্তীতে বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু পাকিস্তানি দোসরেরা দেশের সংবিধানে ধর্মীয় গোঁড়ামির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছে।

৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি বনে যান খন্দকার মোশতাক আহমেদ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাত্র এক মাস দশদিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন অবৈধ রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক। ‘দি বাংলাদেশ গেজেট, এক্সট্রা অর্ডিনারী পাবলিশড বাই অথরিটি’ লেখা অধ্যাদেশটিতে স্বাক্ষর করেন খন্দকার মোশতাক। এ অধ্যাদেশে ছিল দুটি ভাগ। প্রথম অংশে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রীমকোর্টসহ কোন আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোন আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন, তাদের দায়মুক্তি দেয়া হলো। অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে কোন আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোন আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার পর খুনীদের যাতে বিচার করা না যায়, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের আইনগত কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করা না যায় এবং হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্র ও নেপথ্যে জড়িতদের যাতে সুরক্ষা দেয়া যায়, তার জন্যই এই কুখ্যাত অধ্যাদেশ জারি করা হয়।


৬ নভেম্বর, রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বেতারে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘গত ১৫ আগস্ট কতিপয় অবসরপ্রাপ্ত এবং চাকরিচ্যুত সামরিক অফিসার এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের হত্যা করে। খন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে সামরিক আইন জারি করেন। প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনার সঙ্গে সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট ছিল না। দেশবাসী আশা করেছিল, দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরে আসবে, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু আমরা সবাই নিরাশ হয়েছি। দেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমনকি সম্প্রতি কারাগারে অন্তরীণ কিছু বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।

পরবর্তীতে মোস্তাক সরকার আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি বাদ দেয়ার জন্য পত্র দেয়া হয়। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত বিচারপতি সায়েমের সরকার ১৯৭৬ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে অনুমোদন প্রদান করে।

জিয়াউর রহমান কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে সকল ক্ষমতা গ্রহণ করার পরদিনই সরকার এক অধ্যাদেশ জারি করে বাহাত্তরের সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে আদর্শিক পরিবর্তন আনে। সংবিধানের শিরোনামে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লিপিবদ্ধ করা হয়। ‘জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’-এর পরিবর্তে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার কথাগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়। এ অধ্যাদেশের ফলে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সকল মানুষের সমান অধিকার এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খায় আঘাত হানে।

৫ এপ্রিল ১৯৭৮, জেনারেল জিয়ার সরকার এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে, বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধীরা এবং বিদেশে পালিয়ে থাকা আলবদর-রাজাকারদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও, জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করেন। সেদিন সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মধ্যে দিয়ে তাঁর আমলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বাধাগ্রস্ত করা হয়।

এইভাবেই ৭৫ পরবর্তী (৯৬ এর পূর্ব পর্যন্ত) সরকারগুলো বঙ্গবন্ধুর খুনি ও রাজাকার আলবদর আল শামসকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি ও পবিত্র সংসদে ঠাঁই এবং মন্ত্রীত্ব দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করেছে। তখন দেশের প্রতিটি কাঠামোতে পরিবর্তন এনে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে জয়ী স্বাধীন বাংলাদেশের মূলমন্ত্র, চেতনা ও চারটি স্তম্ভকে আঘাত হানা হয়।

খুনিদের লক্ষ্য ছিলো কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধু কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ যেন বেঁচে থাকতে না পারে। কারণ, কেউ বেঁচে থাকলে তারা আবারও জনগণকে সাথে নিয়ে দেশ গঠনে হাল ধরবে। তাই বঙ্গবন্ধু সহ তার পরিবারের সকল সদস্য সহ আত্মীয় স্বজনকেও তারা হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর প্রাণ ভোমরা জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করেছে যেন দেশকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নাম মুছে ফেলা যায়। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সেদিন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ও জাতীয় চার নেতার পরিবার বেঁচে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তারা ৯৬তে ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাসী দেশবাসীর কাছে পুনরায় জনগণের প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ঢাকায় সংবাদ কভার করতে এসে বিমানবন্দর থেকে জোর করে ফেরত পাঠানো সাংবাদিক ব্রায়ান ব্যারন লন্ডনে ফিরে লিখেছিলেন, "শেখ মুজিব সরকারিভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং জনসাধারণের হৃদয়ে উচ্চতম আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবেন। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। এটা যখন ঘটবে, তখন নিঃসন্দেহে তার বুলেট-বিক্ষত বাসগৃহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারক-চিহ্ন এবং তার কবরস্থান পুণ্য তীর্থে পরিণত হবে।"

সাংবাদিক ব্রায়ন ব্যারন এর সেই কথাটি আজ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণসহ পুরো বিশ্বের কাছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের মুছে যাওয়া ইতিহাস ফিরিয়ে দিয়েছেন।

লেখকঃ সিয়াম মাহমুদ 
আহ্বায়ক সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ০৪ নং খাড়েরা ইউনিয়ন শাখা। 
কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। 

শিক্ষার্থী, 
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, 
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।