ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪ |

EN

বুড়ো বয়সে বাল্যবিয়ে করতে এসে ধরা খাদ্য কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১১, ২০২২

বুড়ো বয়সে বাল্যবিয়ে করতে এসে ধরা খাদ্য কর্মকর্তা
বুড়ো বয়সে বাল্যবিয়ে করতে এসে ধরা খেলেন এক খাদ্য কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বড়াইকান্দী গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠানে বাকবিতণ্ডায় ওই কর্মকর্তাকে স্থানীয় জনতা গণধোলাই দেয়।

পরে রৌমারী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই কর্মকর্তাকে জনরোষ থেকে রক্ষা করেন।

এ সময় অপর দুই খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে অনুষ্ঠান স্থল থেকে সটকে পরেন তিনি। গণধোলইয়ের শিকার ওই খাদ্য কর্মকর্তার নাম ইসকে আব্দুল্লাহ (৫৪)। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি কুড়িগ্রাম শহরে ৩০ শতক জমি, ১০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ মোটা অংকের টাকা প্রলোভন দেখিয়ে ওই গ্রামের এক কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিয়ে করতে গিয়েছিলেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে সঙ্গে ছিলেন কুড়িগ্রাম সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান এবং নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান।

অভিযুক্ত খাদ্য কর্মকর্তা দিনাজপুর সদরের সুইহারী (খালপাড়া) গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে ইসকে আব্দুল্লাহ জানান, উভয়ের সম্মতিতে বিয়েটা হচ্ছিল। আমার প্রথম স্ত্রীর এতে সম্মতি আছে। তার দুটি অপারেশনের পর তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম। তার অনুমতি নিয়ে আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে এসেছি। মেয়ের বয়স কম এটা আমার জানা ছিল না। তাই একটু হট্টগোল হয়েছে। আমরা পরবর্তীতে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করবেন বলে জানান তিনি।

স্থানীয়দের দাবি, প্রথম স্ত্রীর ভুয়া অনুমতি সনদ ও কিশোরীকে ফুঁসলিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করতে আসায় ওই কর্মকর্তাকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত ইসকে আবদুল্লাহ স্ত্রী কামরুন নাহার বলেন, আমাদের তিন সন্তানের মধ্যে এক মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেক মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। একমাত্র ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পরে।

তিনি অভিযোগ করেন, তার স্বামী কিছুদিন ধরে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য তাকে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আসছিলেন। এতে সম্মতি না দেয়ায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। এনিয়ে দিনাজপুর থানায় যৌতুক ও নারী নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়েছে।

শৌলমারী ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য ইউনূছ আলী জানান, ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় শৌলমারী এমআর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসকে আব্দুল্লাহ। এর সুবাদে পরীক্ষা কেন্দ্রেই পরিচয় হয় ওই এসএসসি পরীক্ষার্থীর সঙ্গে। পরে ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল নম্বরও নেন ওই কর্মকর্তা। এরপর বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে কল দিয়ে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

তিনি বলেন, প্রেমের সম্পর্ক গভীর হলে মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে তিন সদস্যের বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে উপস্থিত হন। বিধি মোতাবেক প্রথম স্ত্রীর ভুয়া অনুমতির প্রত্যয়নপত্র নিয়ে এসেছেন। তার সঙ্গে আসা দুই কুড়িগ্রাম সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান এবং নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা বিয়ের সাক্ষী হতে রাজি হননি। এমনকি তার কোনো স্বজনও আসেননি।

ইউনূছ আলী বলেন, ওই শিক্ষার্থীর বিয়ের বয়স না হওয়ায় তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এ সময় স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে একপর্যায় ওই খাদ্য কর্মকর্তাকে গণধোলাই দেয়। এ সময় জনতার রোষানল থেকে তাকে উদ্ধার করে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু।

রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, ওই কর্মকর্তা বিয়ে করতে এসে জনতার রোষানলের শিকার হয়েছেন। পরে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ওই কর্মকর্তার সঙ্গে বরযাত্রী হিসেবে আসা কুড়িগ্রাম সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান ও নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান বলেন, তিনি তার এক আত্মীয়র বাড়িতে দাওয়াতের কথা বলে আমাদেরকে রৌমারীতে নিয়ে আসেন। পরে দেখি তিনি বিয়ে করার উদ্দেশ্যে এসেছেন। এ সময় আমাদের দুজনকেই বিয়ের সাক্ষী হতে বলেন। আমরা সরকারি কর্মকর্তা, বাল্যবিয়েতে সাক্ষী হতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয়দের সঙ্গে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ সময় রৌমারী সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালুর সহযোগিতায় আমরা ঘটনাস্থল থেকে সরে আসি।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা জানান, কুড়িগ্রাম সদরে ৩০ শতক জমিতে বাড়ি করে দেবেন। ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আমার কোমলমতি মেয়েকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সুবাদে তার প্রথম স্ত্রীর ভুয়া অনুমতি সনদসহ দুজন লোককে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে আসেন। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, রাণীশংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা দুদিনের ছুটিতে রয়েছেন। এ ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন বলে জানান তিনি।