ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪ |

EN

আবার রাজনীতির মাঠে ইউনূস?

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১১, ২০২২

আবার রাজনীতির মাঠে ইউনূস?
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানামুখী তৎপরতা চলছে। এরকম তৎপরতার অংশ হিসেবে রাজনীতিতে একটি তৃতীয় ধারা সৃষ্টির প্রয়াস চলছে এবং এই প্রয়াসের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক মহল। তারা মনে করছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি'র বাইরে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম দরকার। আর এই প্লাটফর্মে এমন একজন ব্যক্তি থাকা দরকার যাকে জনগণ নেতা হিসেবে বিবেচনা করবেন এবং যার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আর এর সবকিছু বিবেচনা করে রাজনীতিতে একটি নতুন জোট বা প্রক্রিয়া চালু করার নীরব প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে ক্রমশ। আর এই প্রচেষ্টার নেপথ্যে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নানা কারণেই ইউনূস এখন আবার রাজনীতিতে আগ্রহী হয়েছেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।

বিশেষ করে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের একের পর এক ব্যবস্থাকে ইউনূসের ঘণিষ্ঠরা 'আক্রোশমূলক' হিসেবে মনে করছেন এবং এ কারণেই তারা এর পাল্টা হিসেবে রাজনৈতিকভাবে ইউনূসকে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। যদিও ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত ইতিবাচকভাবে কোনো সাড়া দেননি। বরং রাজনীতিতে সরসরি অংশগ্রহণের ব্যাপারে এখনও তিনি তার নেতিবাচক অবস্থানেই আছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো শেষ পর্যন্ত তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে হয়তো তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতেই পারেন।

ইউনূস অবশ্য তার ঘনিষ্ঠদেরকে বলেছেন, সরকার তাকে অপমান করার চেষ্টা করছে এবং এই অপমানের জবাব হিসেবে রাজনীতির মাঠে যদি তিনি নামেন তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। আর সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা দেশগুলো রাজনীতিতে একটি তৃতীয় ধারার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দু'টি দলের উপরই তাদের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ১৩ বছরের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইন হয়েছে, সুশাসন সঠিকভাবে পালিত হয়নি বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। তাদের একাধিক রিপোর্টে তারা এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলাভাবে কথা বলেছে। নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে এসেই বাংলাদেশের নানা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি কথা বলছেন। কিন্তু সরকারের উপর বা আওয়ামী লীগের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যতই সমালোচনা থাকুক না কেন তারা বিকল্প হিসেবে বিএনপিকেও ভাবতে পারছে না। বিএনপি'র ব্যাপারে তাদের অনেক আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি'র নেতৃত্বে তারেক জিয়ার থাকা, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক আপত্তি রয়েছে।

তাছাড়া বিএনপি'র অতীতে দেশ পরিচালনার বিষয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, আওয়ামী লীগের বিকল্প কখনোই বিএনপি হতে পারেনা। এই জন্যই আওয়ামী লীগ-বিএনপি'র বাইরে একটি তৃতীয় শক্তির উত্থান হওয়া দরকার বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন জানাচ্ছে দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ। তারাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আওয়ামী লীগ-বিএনপি'র সমালোচনায় মুখর। আর এ কারণেই রেজা কিবরিয়াকে রাজনীতির মাঠে নামানো হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু রেজা কিবরিয়ার রাজনৈতিক দল এবং জোট কোনটাই জনগণের কাছে তেমন কোন আগ্রহ মেলতে পারেনি। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের এবং বর্তমান নেতৃত্বে বিকল্প হিসেবে রেজা কিবরিয়া কোনভাবেই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নন। তাছাড়া রেজা কিবরিয়া আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও জাতীয়ভাবে তার পরিচিতি একেবারে নেই বললেই চলে। এরকম পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, ড. ইউনূসই হতে পারেন রাজনীতির ট্রামকার্ড। আগামীর রাজনীতির ট্রামকার্ড ড. ইউনূসকে নিয়ে এগুলো সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোটা সহজ হবে। উল্লেখ্য যে, ২০০৬ সালের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরও ইউনূসকে রাজনীতির মাঠে নামানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। ইউনূস সেবার রাজনীতির মাঠে যেয়েও পরবর্তীতে আবার ফিরে আসেন। এবার তিনি আসবেন কিনা সেটি এখন দেখার বিষয়।