ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪ |

EN

বাংলাদেশের নির্বাচন: মাঠে তিন পরাশক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১১, ২০২২

বাংলাদেশের নির্বাচন: মাঠে তিন পরাশক্তি
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিন রাষ্ট্রের আগ্রহ বেড়েছে। তিন রাষ্ট্রই মাঠে নেমেছে। তবে তারা পৃথক পৃথক অবস্থান থেকে মাঠে নেমেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারত বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং তিনটি দেশের কূটনীতিকরাই এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে অন্যান্য বার যেমন নির্বাচন নিয়ে সবগুলো বিদেশি দূতাবাসের একইরকম অবস্থান থাকে, এবার পরিস্থিতিটা তেমন নয়। বরং তিনটি দেশেরই ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য আছে বলে দেখা যাচ্ছে।

আজ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন তারা অবাধ সুষ্ঠু দেখতে চায়। তবে কোনো বিশেষ দলের প্রতি তাদের কোনো পক্ষপাত নেই। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্য এমন একটা সময়ে দেয়া হলো, যখন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছিলেন। এই সময়ই মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করেন এবং তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের ব্যাপারেও সুপারিশ করেন। সবকিছু মিলিয়ে আগামী নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান খুব সুস্পষ্ট।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে চাপে রাখতে চায় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থাকে সেটি নিশ্চিত করতে চায়। আর সেই নিশ্চিত করার জন্যই নির্বাচনকে তারা টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে। এই নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাপ প্রয়োগের একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে যে পশ্চিমা দেশগুলোকে এক করে যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ দেওয়া যায় তাহলে সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য দেখাতে বাধ্য হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগে যেমন চীন শুধু অর্থনৈতিক আগ্রাসনের দিকে মনোযোগী ছিল, এখন সে অবস্থা থেকে সরে এসেছে। বরং রাজনৈতিক কর্তৃত্বের ব্যপারেও ব্যপকভাবে মনোযোগী। এরকম বাস্তবতায় চীন আগামী নির্বাচনে কি চায়, এটি একটি বড় প্রশ্ন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন এবং বাংলাদেশ এক চীন নীতির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ঘোষণা করেছে।

চীন তার অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী। আগামী ডিসেম্বরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে এবং সম্মেলনের মাধ্যমে বর্তমান নেতৃত্ব বহাল রাখার চেষ্টা করবে। এর পরপরই চীন বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে আরও ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন মনে করছে যে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে যেন বাংলাদেশ কখনোই পশ্চিমা বলয়ে না যায়। বাংলাদেশের কূটনীতি যেন নতজানু না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নিরঙ্কুশ আনুগত্য চায়, সেই আনুগত্যের ব্যাপারে যেনো পাল্টা ব্যবস্থা চীন নিতে পারে সে সম্পর্কে তারা সবসময় সজাগ এবং সচেষ্ট থাকবে। কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে যেনো কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, মৌলবাদী এবং সন্ত্রাসবাদীরা ক্ষমতা গ্রহণ করতে না পারে সে ব্যাপারে ভারতের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে ভারত মনে করে যে, বর্তমান সরকার থাকার কারণেই ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাপট কমে গেছে এবং ভারত একটি নিরুপদ্রব সময় কাটাচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের মাধ্যমে কোনোভাবেই যেন সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে, সেটির ব্যাপারে ভারত এখন থেকেই তৎপর। এই তিনটি বৃহৎ দেশের সক্রিয় অবস্থানের কারণে আগামী নির্বাচনে মাঠের লড়াইয়ে চেয়ে কূটনৈতিক লড়াই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন দেখার বিষয় এই কূটনীতিক লড়াইয়ে কে জেতে। 

সুত্র: বাংলাইনসাইডার