ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪ |

EN

রেমিট্যান্স–যোদ্ধারা আর কত কষ্ট সইবেন?

কলাম ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, আগস্ট ৫, ২০২২

রেমিট্যান্স–যোদ্ধারা আর কত কষ্ট সইবেন?
বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ভূমিকা ব্যাপক। নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে অপর আরেকটি দেশে গতর খেটে লাল-সবুজের পতাকার সম্মান ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধিকল্পে কাজ করে আসছেন প্রবাসী শ্রমিকেরা। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সে গড়ে ওঠা স্তম্ভে মজবুত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত। দেশের বর্তমান জিডিপিতে প্রায় ১২ শতাংশ অবদান রেখে চলা রেমিট্যান্স হয়ে উঠেছে দেশের উন্নয়ন ও মুদ্রার রিজার্ভ স্ফীতির উল্লেখযোগ্য অংশীদার।

বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, করোনাকালীন সময়ে নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায়১ হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে), যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে আহরিত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাশ ৬শত ৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছেন। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ছিলো প্রাশ ৬৭ হাজার ৬০ কোটি। অবাক হওয়ার মতো চিত্র হচ্ছে, গত জুলাই (২০২২) মাসের ২৮ দিনে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিলো ২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ফলে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিলো প্রায় ৩৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৬-৭ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন। বিষ্ময়ের বিষয় হলো, এই প্রবাসীরা দেশের জন্য প্রতিবছর প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমান, প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা, যা কিনা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৫০ শতাংশেরও বেশি। এত বিপুলসংখ্যক মানুষ দিন–রাত পরিশ্রম করে শুধু দেশের মুদ্রার রিজার্ভ স্ফীতিতে অবদান ও পরিবারের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থাই করেননি বরং জীবনযাত্রার মান, কর্মসংস্থান, কাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে রেখে আসছেন অভাবনীয় অবদান। তবে দুঃখের বিষয় হলো, দেশের জন্য এত বড় অবদান রাখা প্রবাসীরা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে অবহেলার বস্তুতে পরিণত হয়েছে।  

সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। সেখানকার আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় অহরহ রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মৃত্যু সংবাদ শোনা যায়। তবে দুঃখের বিষয় হলো, মৃত্যুর পর প্রবাসী শ্রমিকদের লাশ দেশে থাকা স্বজনদের কাছে আনতে লাগে দীর্ঘ সময়। প্রায় সময় লাশ আনার এ প্রক্রিয়া ১বছর পর্যন্ত দীর্ঘ হতে দেখা যায়- যা নিসন্দেহে সরকারের ব্যর্থতা। অনেক সময় দেখা যায়, প্রবাসীরা ভিসা সহ বিভিন্ন জটিলতায় পড়লে পরামর্শদাতা হিসেবে কেউ পাশে থাকে না। প্রবাসে তার কষ্টে থাকলেও প্রকাশ করেন না কারো কাছে। আপন মনে ভাবেন দেশে গেলে সব কষ্ট লাঘব হবে। কিন্তু লজ্জার বিষয় হলো, ফেরা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের নুন্যতম মূল্যায়ন করা হয় না এয়ারপোর্টে। বরং তাদের নিয়ে আসা লাগেজসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র চেকিংয়ের নামে ছুড়ে ফেলা হয়। গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রায় সময় প্রবাসীদের জিনিসপত্র চুরির সংবাদও সর্বসাধারণের দৃষ্টিগোচর হয়। তবে নেয়া হয়না শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ। বলা চলে দেশে-প্রবাসে দুজায়গাতেই মহাবিপদ আর চরম অবহেলা-কষ্টে রয়েছেন প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।
 
মনে রাখতে হবে, দেশের এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা আমাদের জন্য মহামূল্যবান সম্পদ। দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন প্রবাসী রেমিট্যান্স। অতত্রব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সকল প্রকার কষ্ট লাঘবে অতিদ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।