চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ১১ জন নিহতের ঘটনার ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন মহানগর প্রভাতী ট্রেনটির চালক (লোকোমাস্টার) জহিরুল হক খান।
তিনি জানান, মাইক্রোবাসটি অনেক দ্রুত রেল লাইন ক্রস করছিল, ট্রেনও অনেক স্পিডে ছিল। ফলে সংঘর্ষ হয়েছে বুঝতে পারলেও ওই মুহূর্তে কিছু করার ছিল না।
গতকাল শনিবার (৩০ জুলাই) তিনি বলেন, গাড়িটি এত কাছাকাছি চলে আসছে ট্রেন থামানো যায়নি। সাধারণত একটি ট্রেন থামাতে হলে ৪০০ গজ পর্যন্ত দূরত্ব থাকতে হয়। তবুও সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন কন্ট্রোলের চেষ্টা করি। কিন্তু এর আগেই ইঞ্জিনে উঠে যায় মাইক্রোবাসটি। তখন অবশ্য সবকিছু শেষ।
জহিরুল খান বলেন, আমার ধারণা, এখানে অনেক চলাচলের পথ আছে যেগুলো বৈধ নয়। কারণ, স্বাভাবিকভাবে ব্যারিয়ার থাকলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। আর ওখানে কোনো গেটম্যান ছিল কি না, আমি খেয়াল করতে পারিনি। তবে গেইটম্যান থাকলে এই ঘটনা ঘটত না। এ ছাড়া গেটে কোনো সিগন্যালও ছিল না।
তিনি আরও বলেন, এই দুর্ঘটনার পেছনে অন্যতম ভুল ছিল মাইক্রোবাসটির চালকের। তার দরকার ছিল আশপাশ দেখেই রেললাইন পার হওয়া। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। যার ফলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানিয়েছে, ঘটনার সময় গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন সেখানে ছিলেন না। ব্যারিয়ারও ফেলানো ছিল না। তাই মাইক্রোবাসটি রেললাইনে উঠে যায়।
এদিকে এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুর পৌনে ২টার দিকে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা মিরসরাইয়ে খৈয়াছড়া ঝরণা দেখতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে দুপুরে খৈয়াছড়া রেল স্টেশনের কাছে লেভেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় মাইক্রোবাসটির সঙ্গে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেন মহানগর প্রভাতীর ধাক্কা লাগে।
ট্রেনটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় মাইক্রোবাসটিকে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় যানটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছয়জনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠান।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন কোচিং সেন্টারের চার শিক্ষক জিয়াউল হক (২২), মোস্তফা মাসুদ রাকিব (১৯), রিদুয়ান চৌধুরী (২২) ও ওয়াহিদুল আলম (২৩), শিক্ষার্থী সামিরুল ইসলাম হাসান, মোসাহাব আহমেদ (১৬), ইকবাল হোসেন, শান্ত শীল, মোহাম্মদ আসিফ ও সাজ্জাদ হোসেন এবং মাইক্রোবাসচালক গোলাম মোস্তফা (২৬)। এরই মধ্যে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।