ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪ |

EN

জনশুমারি সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে ব্যর্থঃ পুনরায় প্রয়োজন

কলাম ডেস্ক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জুলাই ২৮, ২০২২

জনশুমারি সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে ব্যর্থঃ পুনরায় প্রয়োজন
আবুল হাসান সুজন। পেশায় একজন আইনজীবী। পরিবার সমেত বসবাস করেন রাজধানী শহর ঢাকায়। এবারের ষষ্ঠ জাতীয় জনশুমারি অনুষ্ঠিত হওয়ার সংবাদে নিজের মধ্যে বোধ করেন এক অন্যরকম আনন্দ, কাজ করে নতুন এক অনুভূতি। তার কারণ একটাই- দেশের মোট জনসংখ্যার সাথে যোগ হবে তার নাম। অথচ তার সেই আনন্দ যে নিমেষেই বাষ্পীভূত হয়ে যাবে-সেটি ছিলো তার কল্পনারও অতীত। সবকিছু ছাপিয়ে ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহ গণনা কার্যক্রম থেকে বাদ পড়ে যান তিনি। বাদ পড়ার কারণ, জনশুমারি পরিচালনায় অদক্ষ ব্যবস্থাপনা।

শুধু তিনি নন বাদ পড়ার তালিকায় যোগ হয়েছে, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার,মাঝি-মাল্লা,কামার-কুমোরসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের নাম। যা কিনা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই হতাশার একটি বিষয়ে পরিনত হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর এ যুগে ডিজিটালাইজেশনের সম্পুর্ন প্রয়োগ না করেই এত বড় ধরনের ভুল অনেকাংশে মেনে নেয়া অসম্ভব।  

সিলেট অঞ্চলে বন্যার সূচনা লগ্নে শুরু হয় দেশের ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহ গণনা কার্যক্রম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উদ্যোগে পরিচালিত এই জনশুমারি কার্যক্রমের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, এবং নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। বাকি ১২ হাজার ৬২৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী। জনশুমারি হতে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। গত এক দশক আগে পরিচালিত ৫ম আদমশুমারি ও গৃহ গণনা কার্যক্রমে দেশের মোট জনসংখ্যা ছিলো প্রায় ১৪ কোটি ৪০ লাখ নথিবদ্ধ করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায় এ সংখ্যা ১৪ কোটি ৯৮ লাখ হতে পারে। এবারের জনশুমারি প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১০ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় কোটি -যেটি কিনা সম্পুর্ন অবিশ্বাস্য। যেখানে দেশে দেশে প্রতি মিনিটে চারটি শিশু জন্ম নিচ্ছে। সে হিসাবে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার ৪৭৯ জন এবং প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ শিশুর জন্ম হচ্ছে - এসংখ্যাকে দশ দিয়ে গুন করলে তার সংখ্যা প্রায় দাঁড়ায় প্রায় ২ কোটি হওয়ার কথা। তাছাড়া সিলেট অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এটির সাথে যোগ হয়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কিভাবে জনসংখ্যার এত নিট অ্যান্ড ক্লিন সংখ্যা প্রকাশ করে করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো? এর উত্তর একটাই, হা-হুতাশ এবং তড়িঘড়ি করে সম্পুর্ন জনসংখ্যা গননা ছাড়াই মোট জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশ করেছে ঐ সংস্থা। যা কিনা আমাদের জন্য চরম লজ্জা ও হতাশার একটি বিষয়। একটি দেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের নির্ভরযোগ্য জনশক্তি তথ্যের উপর- যেখানে দেশের জনসংখ্যার তথ্যই গোঁজামিলে ভরপুর সেখানে মোট জনশক্তির তথ্য পেয়ে দেশের শ্রমবাজার শক্তিশালী করে দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলা একপ্রকার দিবাস্বপ্নের মতো।

পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী আদমশুমারিকে 'জনশুমারি' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। জনশুমারি ও গৃহগণনা বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পরিচালিত হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিস্তারিত এক পরিসংখ্যানিক কার্যক্রম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে প্রথম আদমশুমারি ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। তখন দেশের মোট জনসংখ্যা ছিলো প্রায় ৭ কোটি ১৫ লাখ। দ্বিতীয় আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে, সেসময় দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৯৯ লাখ। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বলছে দেশে প্রতি ১০ বছরে জনসংখ্যা গড়ে ২ কোটি করে বৃদ্ধি পায়। তবে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এবার গত দশ বছরের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র দেড় কোটি অর্থাৎ স্বাভাবিক ভাবেই এই সংখ্যা আরো ৫০ লাখ বেশি হওয়া কথা ছিলো। একদিকে বন্যা অন্যদিকে বন্যা- এদুয়ে মিলে নষ্ট করেছে সরকারের উপর জনগণের আস্থার পরিবেশ। এমতাবস্থায় জনসংখ্যার সঠিক তথ্য জনগণের নিকট উপস্থাপনের জন্য পুনরায় জনশুমারি পরিচালনা করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।