চলতি মাসেই নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে আসছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক। দলের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সম্ভাব্য নাম ‘গণ অধিকার পরিষদ’ অথবা ‘বাংলাদেশ অধিকার পার্টি’। দলটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নতুন দলের সংগঠকদের লক্ষ্য ছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দলীয় প্রধান করা। কিন্তু তিনি নতুন দলের সঙ্গে থাকতে ইচ্ছুক হলেও দলীয় প্রধান হতে রাজি হননি। সংগঠকেরা এখন চাইছেন ওই পর্যায়ের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের কাউকে দলের সভাপতি বা চেয়ারম্যান করতে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে একাধিকজনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সেই বয়স নেই একটি দলের যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়ার। একটি দল করতে হলে সারা দেশে ছোটাছুটি করতে হবে, যার প্রতিপক্ষ হলো একটি ফ্যাসিস্ট সরকার।’
নুরুল হকের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, নতুন দলের সভাপতি বা চেয়ারম্যান হিসেবে যিনিই থাকুন না কেন, নুরুল হক দলের মুখ্য ব্যক্তি হিসেবে থাকবেন। তাঁর চিন্তা ও পরিকল্পনাকে প্রাধান্য দিয়ে সব শ্রেণি–পেশার মানুষকে একত্র করে একটি তারুণ্যনির্ভর দল গড়ার প্রস্তুতি চলছে। এতে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন রাজনীতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনকেও টানার চেষ্টা চলছে। একসময় রাজনীতি করতেন, এখন নানা কারণে নিষ্ক্রিয়—এমন ব্যক্তিদের সঙ্গেও নতুন দলের উদ্যোক্তাদের আলোচনা চলছে। নতুন দলে রাষ্ট্রচিন্তা, ভাসানী অনুসারী পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠন একীভূত হতে পারে বলেও জানা গেছে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সমমনা চারটি সংগঠন একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক দল গঠনে একমত হয়েছেন।
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন দলের মাঠপর্যায়ের কমিটিগুলোতে সভাপতি পদে জ্যেষ্ঠদের এবং সাধারণ সম্পাদক পদে তরুণদের দিয়ে দল সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। দল ঘোষণার পর দ্রুত সময়ের মধ্যেই সারা দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করা হবে।
নতুন দলের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচন করার কথা ভাবছি, যাতে মানুষ আমাদের বিকল্প শক্তি হিসেবে ভাবে। আর নতুন দল ঘোষণার পর আমাদের প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচি হবে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন।’ তাঁর মতে, এ বিষয়ে বড় চাপ তৈরি করা না গেলে সরকারি দল তাদের অনুগত ইসি গঠন করবে।
নিবন্ধন না পেলে কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক বলেন, ‘শর্ত পূরণ হলে ইসি নিবন্ধন দিতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, আমরা নিবন্ধন না পেলে কোনো ভোটই হবে না।’
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক। ওই আন্দোলনের সময় বেশ কয়েকবার হামলার মুখে পড়েন তিনি। এরপর ২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন তিনি। গত তিন বছরে নানা বাধাবিপত্তির পর নতুন দল গঠনে নামেন নুরুল হক ও তাঁর সঙ্গীরা। এই সময়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অন্তত ১৩ বার আক্রান্ত হন তিনি। তাঁর নামে এখনো ১৭টি মামলা আছে। এ ছাড়া তাঁর সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও বেশ কয়টি মামলা রয়েছে। সবশেষ গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে ছাত্র-যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মতিঝিল ও শাহবাগ থানায় তিনটি মামলা হয়। এসব মামলায় ৬৯ জনকে আসামি করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে ২৭ জন এখনো কারাগারে।
নুরুল হক বর্তমানে ছাত্র-যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক। পরিষদ সূত্র জানায়, কোটাবিরোধী আন্দোলনের পর তারা বিভিন্ন জনসম্পৃক্ত বিষয়ে প্রতিবাদ ও কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দল গড়ার উদ্যোগ নেন সংগঠনের নেতারা।
উদ্যোক্তারা জানান, ‘অধিকার’ শব্দটির প্রতি তাঁদের বিশেষ দুর্বলতা আছে। কারণ, এই মুহূর্তে দেশের মানুষ সংবিধানে দেওয়া অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও নাগরিকের ভোটের অধিকার নেই। এই নাগরিক অধিকারগুলো ফিরিয়ে আনতে শক্তভাবে মাঠে নামবে নতুন দল। এ কারণে দলের নামে অধিকার শব্দটি থাকবে। দলের স্লোগান হিসেবে ‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার’ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া ছাত্র অধিকার পরিষদকে কেন্দ্রীভূত করে ইতিমধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবী নিয়ে যে পাঁচটি কমিটি করা হয়েছে, সেগুলোতেও অধিকার শব্দটি রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ, প্রবাসী অধিকার পরিষদ ও পেশাজীবী অধিকার পরিষদ। শিগগির নারী অধিকার পরিষদ নামে আরেকটি সংগঠন করা হবে। এ সংগঠনগুলোকে নতুন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
নুরুল হক বলেন, ‘এখন মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার বেশ পরিবর্তন হয়েছে। সবাই মর্যাদার সঙ্গে সমাজে থাকতে চায়, সংঘাতমুক্ত একটি সহনশীলতার রাজনীতি চায়। আমরা দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র ও মেধার চর্চা করব।’
সূত্র: প্রথম আলো