ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪ |

EN

"পদ্মাসেতু বা দক্ষিণাঞ্চলের স্বর্গসেতু"

কলাম ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, জুন ২৪, ২০২২

"পদ্মাসেতু বা দক্ষিণাঞ্চলের স্বর্গসেতু"
"এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবেনাকো তুমি,
 সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি!"

পৃথিবীর একমাত্র ব-দ্বীপ বাংলাদেশ। যার আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিঃমিঃ,ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী,সাগর,উঁচু নিঁচু পাহাড়,ঝর্ণা আর নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি নিয়ে এযেনো দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বমানচিত্রে  সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলার প্রতীক হয়ে! প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতির  দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে অদ্বিতীয়। কেননা এই সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি দিয়েই ব-দ্বীপ খ্যাত বাংলাদেশ বিশ্বকে রানীর মতোই প্রতিনিধিত্ব করে। 

পৃথিবীতে সাগর, উপ-সাগর ও মহাসাগরের পাশাপাশি বহু নদ-নদী রয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর বুকে বাংলার পদ্মাই কেবল ভীষণ খরস্রোতা নদী; সেই সাথে প্রচণ্ড উত্তালও বটে। পানি প্রবাহের দিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের পর ২য় বৃহত্তম নদী "পদ্মা"! পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৪০ হাজার কিউবেক পানি প্রবাহিত হয়। যার জন্য এমন স্থানে কোনো স্থাপনা বা সেতু নির্মাণ অত্যধিক চ্যালেঞ্জেং।

কিন্তু সেই খরস্রোতা পদ্মা নদীর উপরই দীর্ঘ চার বছর সময় নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, যার নাম "পদ্মা বহুমুখী সেতু"!  যার দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিঃমিঃ বা ২০,২০০ ফুট, প্রস্থ ১৮.১০ মিঃ বা ৫৯.৪ ফুট এবং ৮১ টা পিলার ও ৪১ টা স্প্যান রয়েছে। এমন বৃহৎ প্রকল্প স্বাধীন বাংলায় এই প্রথম। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এটা করা হচ্ছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের একক প্রচেষ্টায় এবং নিজস্ব অর্থায়নে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলার মানুষের আশার বাতিঘর, মানবতার মা, বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত, সমুদ্র বিজয়ী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। যিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বের বড় বড় সংস্থার সাহায্য ছাড়া সোনার বাংলা কি করে পদ্মাসেতু গড়ে তুলে। একই সাথে তিনি এটাও প্রমাণ করেছেন যে, "সত্যিই বাঙ্গালীরা বীরের জাতি"। কারণ আমাদের ত্যাগ,তিতিক্ষা, লড়াই, আন্দোলন সংগ্রামের এক উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে, যেখানে আমরা বিজয়ী হয়েছি; আমরা লড়াই করতে জানি, সংগ্রাম করতে জানি, আমরা অর্জন করতে জানি। যদি ছুটে চলার ইচ্ছে করি, তবে আমাদের চলার পথ কেউ আটকাতে পারেনা,ব্যর্থতা নয়,আমরা সফলতাকে আলিঙ্গন করি, কেননা আমরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে ছুটে চলি সম্মুখে। '৫২সালে রক্তঝরিয়ে মাতৃভাষা বাংলা এবং '৭১ সালে স্বাধীন দেশ অর্জন করেছি। সেই ধারাবাহিতায় আমরা পদ্মাসেতু তৈরী করেও বিশ্বকে দেখিয়ে দিলাম। 

স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু হয়েছিলো ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে, চলতি বছরেই যানচলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। যার সংযোগস্থল মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরাকে স্পর্শ করবে এবং সেই সাথে যুক্ত হবে সড়কপথে সরাসরি পূর্বাঞ্চলের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ টি জেলার জনপদ!   

পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটারে ৪১ টি স্প্যান বসাতে মোট ৯১৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ করতে প্রায় ২৯,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেতুটির উপরের তলায় চারলেনের সড়ক ও নিচ তলায় থাকবে রেল লাইন।

পদ্মাসেতু প্রকল্প দেশের অর্থায়নে সবচেয়ে বৃহৎ এবং চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প।  খরস্রোতা পদ্মানদীর উপর সেতু করা একসময় স্বপ্ন নয়, দুঃস্বপ্ন ছিলো।কিন্তু আজ তা আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতার একেবারেই সন্নিকটে, প্রভাতে সূর্যোদয় হলেই নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে সোনার বাংলায়! মানুষের আজীবনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে। দেশের পূর্বাঞ্চলের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সরাসরি সড়কপথে ২১ টি জেলা সংযুক্ত হবে, ফলে এ অঞ্চলের ১৭,০০০ বর্গ কিঃমিঃ জনপদ এবং প্রায় ৩ কোটি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে। শুধু ভাগ্য নয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।তাই এসেতুকে আমি "দক্ষিণাঞ্চলের স্বর্গসেতু" বলে আখ্যা দিতে চাই!

যার নেপথ্য ইস্পাত কঠিন নেতৃত্ব দিচ্ছে, ১৬ কোটি মানুষের আশা ভরসা,আমাদের অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আপনার এমন মহৎ সৃষ্টি দেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। যার রাজসাক্ষী হতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত বোধ করছি! সোনার বাংলা এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে......
কবির ভাষায় বলতে চাইঃ-
"একটি বাংলাদেশ,
 তুমি জাগ্রত জনতার
 সারা বিশ্বের বিস্ময়,
 তুমি আমার অহংকার!