উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আর টানা বৃষ্টিতে রাজীবপুরের ব্রহ্মপুত্র ও সোনাভরি নদীতে আশঙ্কাজনক হারে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এতে করে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে আশঙ্কা করছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র স্রোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে ঘর-বাড়ি, বসতভিটা আবাদি ফসলসহ নানা স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে অতিদ্রুত ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোরদাবি জানিয়েছেন ভাঙ্গন এলাকার পরিবারগুলো।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার বিস্তীর্ন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।বসতবাড়িতে উঠতে শুরু করেছে বন্যার পানি। এতে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এছাড়া শত শত একর জমির পাট, তিল, কাউন, বাদাম, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল পানির নিচে চলে যাচ্ছে। এতে করে চরম আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
অপরদিকে গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বন্যা কবলিত পরিবার। সংকট দেখা দিয়েছে শিশু খাদ্য, পশুখাদ্য ও শুকনা খাবার ।
শনিবার (১৮ জুন) ব্রহ্মপুত্র ও সোনাভরি নদের বিভিন্ন বিস্তীর্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কোদালকাটি ইউনিয়নের চর সাজাই, পাইকান্টারী পাড়া, পাখিউড়া, আনন্দবাজার, শংকর, মাধবপুর, মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ভেলামারী, বড়বের, কীর্তনটারী, নাওশালা, শিকারপুর, চরনেওয়াজী, নয়াচর ও সদর ইউনিয়নের বালিয়ামারী, ব্যাপারীপাড়া, মিয়াপাড়া, বাউলপাড়া সপ্তাহ খানেক আগে প্লাবিত হলেও মদনেরচর, বদরপুর, মেম্বরপাড়া, মুন্সিপাড়া, করাতিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র স্রোতে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে আরও নতুন নতুন গ্রাম।
কোদালকাটি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মাইদুল জানান, তার অনেক গাছপালা নষ্ট ও পুকুরের মাছ চলে গেছে। গ্রামের আরো অনেকেই জানান, তাদের ঘরে খাবার নেই, শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি প্রয়োজন।
বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু জানান, "এবছর আমাদের এলাকায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সকল ফসল পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে বন্যা ভয়াবহ আকার নিতে পারে। সরকারিভাবে এখনও কোন ত্রাণ-সামগ্রী হাতে পাই নি।"
রাজীবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিরন মো. ইরিয়াস জানান ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বলেন, এই খারাপ পরিস্থিতিতে সরকারী অনুদান দরকার।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত চক্রবর্তী জানান, "বন্যা ও নদী ভাঙ্গন এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রশাসনিকভাবে সাময়িক প্রস্তুতি নিয়েছি। অতি দ্রুত দুর্গম এলাকায় অসহায়দের জন্য কিছু ত্রাণ সামগ্রী, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি পৌছে দেয়া হবে।"
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, "আগামী ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে আগামী কয়েকদিন জেলার কয়েকটি নদীতে পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এখন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।"