ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: রবিবার, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১
২০১৮
সালের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে
দেশ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ আওয়ামী
লীগ। চলতি মেয়াদে ক্ষমতাসীন
হওয়ার পর থেকেই মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনি
ইশতেহার ’দুর্নীতিমুক্ত সুশাসনের বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’ ঘোষণা করেন। সরকার ও দলের মধ্যে
এমন নজিরবিহীন নীতির প্রতিফলন ঘটান তিনি।
আগে
থেকে চলে আসা সন্ত্রাস
ও মাদকবিরোধী অভিযানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৯ সালে আগে
নিজ দলের ভেতরে দুর্নীতিবিরোধী
অভিযান চালানো হয়। সে বছরের
সেপ্টেম্বর মাস থেকে দেশ
জুড়ে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান
শুরু হয় ক্যাসিনো দিয়ে।
১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে শুরু
হয় সরকারের শুদ্ধি অভিযান। একই দিনে ফকিরেরপুল
ইয়ংমেনস ক্লাবেও অভিযান চলে। ঢাকার ক্যাসিনোগুলোর
নিয়ন্ত্রক ছিলেন ঢাকা মহানগর যুবলীগের
(দক্ষিণ) সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট। তার
সহযোগী হিসেবে নাম আসে সাংগঠনিক
সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কাউন্সিলর ও যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক মমিনুল হক ওরফে সাঈদ,
যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক ওরফে আরমান,
নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের
সভাপতি এস এম রবিউল
ইসলাম ওরফে সোহেল প্রমুখের।
ক্যাসিনোকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় তৎকালীন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ
যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগীদের
গ্রেফতার করা হয়।
ক্যাসিনো
ব্যবসার বাইরে ঠিকাদারি থেকে বিপুল অর্থবিত্তের
মালিক, নির্মাণ খাতের তথাকথিত ’গডফাদার’ জি কে শামীম
গ্রেফতার হন। একই সময়ে
সূত্রাপুরের আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল
হক ও রূপন ভূঁইয়ার
বাড়িতে অভিযান চালিয়ে র্যাব বিপুল
পরিমাণ স্বর্ণ ও অর্থ উদ্ধার
করলেও তাঁদের ধরতে পারেনি। পরে
তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর
হাতে ধরা পড়েছেন।
জেলের
ভাত না খেলেও সেসময়
পদ হারিয়েছেন তৎকালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী,
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার,
সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, ছাত্রলীগের
সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন
এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ অনেকেই। ব্যাংক হিসাব তলব ও বিদেশযাত্রায়
নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ নানা আইনি পদক্ষেপের
মুখেও পড়তে হয়েছে তাদের।
এ
ছাড়া, সে সময় তদবির-বাণিজ্যে যুক্ত হয়ে বিপুল অর্থসম্পদের
মালিক বনে যাওয়া নরসিংদী
জেলা যুব মহিলা লীগের
বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকেও জেলহাজতে
পাঠানো হয়েছে।
করোনাকালে
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আরো দুটি আলোচিত
ঘটনা হচ্ছে করোনার সনদ জালিয়াতিসহ নানা
প্রতারণায় জড়িত রিজেন্ট হাসপাতালের
চেয়ারম্যান সাহেদ করিম এবং জেকেজির
প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরী ও
তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে
গ্রেফতার করা। বর্তমান সরকার
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই
মহাপ্রতারক সাহেদ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য পরিচয় দিয়ে সরকার ও
দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের অপতৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী
নির্দেশে পরিচালিত এ শুদ্ধি অভিযানকে
স্বাগত জানিয়েছিল সব শ্রেণি ও
পেশার মানুষ। আওয়ামী লীগের যেসব পোড় খাওয়া
নেতা অনুপ্রবেশকারী ও সুযোগসন্ধানীদের কনুইয়ের
গুঁতোয় টিকতে পারছিলেন না, তারাও মনেপ্রাণে
চাইছিলেন এ রকম একটি
অভিযান চলুক। তবে বেশিদিন টিকেনি
এই শুদ্ধি অভিযান। আওয়ামী লীগের ২১ তম জাতীয়
কাউন্সিলের পর ধীরে ধীরে
অভিযানটি স্তিমিত হয়ে যা বলে
অভিযোগ অনেকের।
আওয়ামী
লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা অবশ্য শুদ্ধি
অভিযান থেমে গেছে কথাটি
মানতে রাজি নন। তারা
বলেন, সারা দেশে দুর্নীতি-অনিয়মসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের
নেতাদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। আওয়ামী
লীগের বিশ্বস্ত নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এই তালিকা প্রস্তুত
করেছেন দলের সভানেত্রী ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলীয়
একাধিক সূত্রে জানা যায়, তালিকায়
স্থান পাওয়া এসব নেতাদের অধিকাংশই
বিরোধী মতাদর্শী অনুপ্রবেশকারী। বড় নেতাদের ঘনিষ্ঠজন
হিসেবেও পরিচিত অনেকে। তবে যত প্রভাবশালী
এবং সরকার কিংবা ক্ষমতাসীন দলের যত ঘনিষ্ঠই
হন না কেন, এবার
ছাড় পাবেন না কেউ। কারো
ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নিতে নারাজ
সরকার ও দল। বিতর্কিত
নেতাদের বিরুদ্ধে এবার জিরো টলারেন্স
নীতি গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
দলটির
দুইজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, দলের ভেতরে থেকে
যারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন
করছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে খোঁজখবর নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা
নেয়া হবে। পাশাপাশি এখন
থেকে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে
কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যেকোনো ধরনের কমিটিতে কাউকে সিলেক্ট করার আগে খুবই
সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। একই
সঙ্গে অতীতে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
ও পরিবারের ভূমিকা বিবেচনা করা হবে। ইতোমধ্যে
সারা দেশে আওয়ামী লীগ
ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর একাধিক
কমিটি বাতিল করা হয়েছে। বাতিলের
পথে তৃণমূলের কিছু কমিটি।
আওয়ামী
লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা জানান, চলতি
মাসেই পরিপূর্ণ দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান জোরালো করা হবে। দলের
পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া
হবে বিতর্কিতদের। দলের তৃণমূল শাখা
সম্মেলনেও তাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ থাকবে। রেহাই পাবেন না বিতর্কিত এমপিরাও।
ইতোমধ্যে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে দলীয়
মনোনয়নে পাবনা-৪ আসনে আওয়ামী
লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ্বাস। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার
মধ্য দিয়ে টানা ২৫
বছর পর এ আসনে
সাবেক এমপি ডিলু পরিবারের
একচ্ছত্র আধিপত্যের পতন হয়েছে।