ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪ |

EN

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে উগ্রবাদীরা তৎপর হয়ে উঠছে

সিয়াম মাহমুদ, বিশেষ প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, এপ্রিল ১১, ২০২২

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে উগ্রবাদীরা তৎপর হয়ে উঠছে
কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চরম বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে যে কোন পন্থায় নিজের বা গোষ্ঠীর মতামত প্রতিষ্ঠা করার জন্য অন্যের মতামত ও বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব না দেওয়া এবং যে কোন উপায়ে নিজের বা গোষ্ঠীর মতামত ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়াই উগ্রবাদ।

ধর্মীয় উগ্রবাদ এখন জাতিরাষ্ট্রের গন্ডি পেরিয়ে গোটা বিশ্বের শান্তি, সংহতি, প্রগতি, অগ্রগতির সামনে বিষাক্ত ফণা তুলে ধরেছে। ধর্মীয় উগ্রবাদের বিষবাষ্প আজ পুরো মানবজাতিকে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে ধর্মকে ব্যাপকভাবে রাজনীতিকরণ চলছে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো থেকে মনে হচ্ছে একটা কুচক্রী মহল দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা তৈরী করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন করতে তৎপর হয়ে  উঠেছে।

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনূভুতিকে স্পষ্টভাবে ঘায়েল করা হয়েছে। 

তেজগাঁওয়ের কলেজের শিক্ষিকার টিপকান্ড থেকে মুন্সিগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডল, টিএসসিতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়ের দাবি কিংবা মেয়েদের নামাজের স্থান থেকে হিজাব কান্ড, সবগুলোতেই রয়েছে পবিত্র ধর্ম ইসলাম। প্রত্যেক ঘটনাতেই ইসলামকে একপ্রকার মানতে বাধ্য করার ব্যাপারে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে, বিষয়গুলো কতটুকু ইসলামের পক্ষের বা ইসলাম বিরোধী তা, ইসলামি আলোচক ও গবেষকরাই ভালো বলতে পারবেন। প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে সাম্প্রদায়িক বিষ পাপ লুকিয়ে  আছে। এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনায় কেউ তো পেছন থেকে কল-কাঠি ঠিকই নাড়ছে। তারা নিজেরা সামনে না এসে আমজনতার দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে অপচেষ্টা করেই যাচ্ছে আর জনতা পুতুলের মতো নেচেই চলছে। যারা ধর্মকে জনগণের কাছে ফাঁদ বানিয়ে তাদের কুৎসিত উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাই। যারা এসব নোংরা কাজ করে চলছে তারা হলো, মহান স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। তারা এই দেশটাকে কায়েদে আজমের পিয়ারা পাকিস্তান অথবা আফগান সেনার তালেবানী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। তারা সুপরিকল্পিত ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাদের, পিয়ারা ইসলামী পাকিস্তান আজও ভালো নেই, স্বাধীনতার জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি কোনো প্রধানমন্ত্রী তাদের মেয়াদ পূর্ণ করে যেতে পারে নি ।

আমরা যদি খেয়াল করে দেখি ২০১৩-২০১৪ সালের পরে দেশে হঠাৎ করে ব্যাপকভাবে ধর্মীয় অরাজকতা ও অস্থিরতা শুরু হয়েছে ২০২০ সাল থেকে অর্থ্যাৎ মুজিব বর্ষের শুরু থেকে। ২০২০ সালে যখন করোনা মহামারি দেখা দিলো, বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশ যখন লকডাউনে আটকে পড়েছে, ঠিক তখনি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী মসজিদ-মাহফিলে ওয়াজের নামে ধর্মীয় গোরামীর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার বিষপাপ ছড়ানো শুরু করে। তারা ইচ্ছাকৃত ভাবেই স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ধর্মান্ধতা শুরু করেছে। ঠিক তার পরের বছর (গতবছর) ২০২১ সালে যখন আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালন করছি তখনো তারা একযোগে সারাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে দিলো। তাদের উস্কানিতে সাধারণ মানুষের প্রাণ ঝড়েছে, সংস্কৃতির শহর হিসেবে খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জ্বালাও পোড়াও করে শহরটিকে শতবছর পিছিয়ে দেওয়া হলো। চট্টগ্রামে অস্থিরতা করা হলো। তারপর পরই দেখা হলো সারাদেশে অরাজকতা তৈরি করে দিয়ে  তাদের মহাগুরু অনৈতিক কাজে (রিফ্রেশমেন্ট) লিপ্ত হতে গিয়ে সোনারগাঁও রিসোর্টে জনগণের হাতে ধরা খেলেন। এই হলো, তাদের অবস্থা। 

এরপর সুনামগঞ্জের শাল্লা কিংবা কুমিল্লার নানুয়াদীঘিরপাড় সব জায়গাতেই এই রুহানি পন্থীদের সমর্থকরায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোয় লিপ্ত ছিলো। যা দেশের জনগণের কাছে প্রমানিত। তারা এভাবেই যুগে যুগে বিভিন্ন রুপে বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন দল কিংবা সংগঠনের হয়ে ধর্মের দোহায় দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে তালেবান বানাতে তৎপর ছিলো এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তারা পূর্বেও সফল হয়নি, আগামীতেও পারবে না।

তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো যেকোনো মূল্যে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে রাতারাতি বর্তমান সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসা। দেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে শক্ত ও সুসংগঠিত করার কাজ চলমান রেখেছে। বিশেষ করে নতুন নেতৃত্বকে কাজে লাগাতে এই বছরের মধ্যেই পুরো দেশে একযোগে সম্মেলন করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে দলটি, এতে দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার হবে। ক্ষমতাসীন দলটিও চাই তারা আবার ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কাজ অব্যহত রাখতে। ঠিক তেমনিই ভাবে, ক্ষমতার পালাবদল ঘটিয়ে নতুন করে ক্ষমতায় আসতে চাই বিরোধী দলগুলো। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে থাকা তৎকালীন দলগুলোর উত্তরসূরীরা সংযুক্ত থেকে দেশকে তালবান বানানোর নীল নকশা একে যাচ্ছে। যার ফলে দেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের জনগণ, ঐদলগুলোকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা-কর্মীদের অপকর্ম এবং প্রশাসনিক সাময়িক ব্যর্থতা জনগণকে দ্বিধাদ্বন্ধে ফেলে দিয়েছে। আর সেই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে ধর্মীয় লেবাসধারী গোষ্ঠী বিভিন্ন মাধ্যমে ও বিভিন্ন কায়দায় দেশের বিরাজমান শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে চলেছে। চারদিকে অপ্রীতিকর ঘটনাগুলোর জন্য অধিকাংশই দায়ী হলো গুজব। আর এইসকল গুজব রটানোর কাজ বিরোধী দলগুললর ছত্রছায়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী দলগুলোর সমর্থকরা। যার ফলে দিনকেদিন সহিংসতা বেড়েই চলেছে। 

সহিংসতা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এমন এক চরম মানসিক অবস্থা যা নিজের বা গোষ্ঠীর বিশ্বাস ও মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে ঝগড়া-ঝাটি, হানা-হানি, মারা-মারি, অগ্নি সংযোগ, বোমা বিস্ফোরণসহ নানা সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যার ফলে জীবনহানিসহ ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে।

মনে রাখতে হবে শ্রেষ্ঠত্বের যে শিক্ষা, নিজেকে সর্বোচ্চ-সর্বত্তোম ভাবা, এটা কুশিক্ষা। এটা দীর্ঘ সময় ধরে চলে এসেছে এবং এর প্রতিফলন আজ সমাজে দেখতে পাচ্ছি। মানুষে মানুষে যে বিভাজন, এটা সমাজে শঙ্কা ও ভীতি তৈরি করছে। শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ বিভাজনের পরিবর্তন সম্ভব হবে না। সামাজিক আন্দোলনে নামতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, সকল প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামজিক আন্দোলনে নামতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পিছপা হলে বাংলাদেশ পাকিস্তান হবে, এরপর আফগানিস্তানে রূপান্তর হবে। সকল নাগরিকের সমান অধিকার রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া যাবে না।